২০১৯ সালে রাজশাহীর দুর্গাপুরে জমিজমা নিয়ে দু্ই পরিবারে মারামারি হয়। সেই মারামারির সঙ্গে একাদশ শ্রেণিতে পড়া ছেলেটির কোনো সংযোগ ছিল না। কিন্তু প্রতিপক্ষ অভিভাবকদের পাশাপাশি তাকেও মামলার আসামি করে। তখন ছেলেটির বয়স ছিল ১৭ বছর। আইনের চোখে শিশু। সেই মামলা চলে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। ১৩ মাস আগে আদালত তাকে বাড়িতে থেকে প্রবেশনের সুযোগ দেন। প্রবেশন মানে নিজেকে সংশোধন বা শুদ্ধ করার সুযোগ। কিন্তু ওই ছেলেটি তো কোনো অন্যায়ই করেনি। তারপরও তাকে শাস্তি পেতে হয়েছে।
২৬ মার্চ ছেলেটির চাচার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হলে এই কাহিনি জানান। স্বাধীনতা দিবসের আগে ২৫ মার্চ রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মুহা. হাসানুজ্জামান যে অভিযুক্ত ৩৫টি শিশুকে চূড়ান্ত খালাস দেন, ওপরে বর্ণিত ছেলেটি তাদের একজন। তবে তারা সবাই অভিভাবকদের মারামারির কারণে আসামি হয়নি। কেউ কেউ সত্যি অপরাধ করেছে। কারও কারও বিরুদ্ধে মাদক সেবন, বহন ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ছিল।
জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, এই শিশুদের মামলাগুলো আগে ছিল রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এ। সেই আদালত থেকেই তাদের প্রবেশন দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি রাজশাহীতে দুটিসহ সারা দেশে মোট ১১টি শিশু আদালত গঠন করা হয়েছে।
২০১৯ সালের ঘটনা। মামলা শেষ হলো ২০২৪ সালের মার্চ মাসে। এরই মধ্যে চারটি বছর চলে গেছে। অপরাধের অভিযোগ মাথায় নিয়েই শিশুরা বড় হয়েছে। তারপরও ১৩ মাসের ‘প্রবেশন–পরীক্ষায়’ তারা উত্তীর্ণ হয়েছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রবেশন সময়ে তারা কী করেছে? প্রত্যেকে বই পড়েছে। মা–বাবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছে। আইনের চোখে অন্যায়—এ রকম কোনো কাজ করেনি।
আদালতের পক্ষ থেকে মুক্তি পাওয়া শিশুদের ফুল ও জাতীয় পতাকা উপহার দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রবেশন কর্মকর্তার প্রতিবেদনের আলোকেই তারা মুক্তি পায়।
শিশুরা আদালত থেকে বের হওয়ার সময় আদালতের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শামসুন্নাহার মুক্তি ও জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান প্রতিটি শিশুর হাতে একটি করে গোলাপ ও রজনীগন্ধা ফুল তুলে দেন। এ ছাড়া তাদের একটি করে কাগজের জাতীয় পতাকা দেওয়া হয়। আদালতের এমন উপহার পেয়ে শিশুরা খুশি মনে বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফেরে।
শিশু আইনের ৪৮ ধারায় শিশুদের অপরাধের জন্য তাদের কারাগারে না পাঠিয়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ আছে। এ আইনের ৩৭ ধারায় অভিযুক্ত শিশু ও অভিযোগকারী পক্ষের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ রয়েছে প্রবেশন কর্মকর্তার। সে আইন অনুযায়ীই অভিযোগকারীর সঙ্গে শিশুদের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আদালত এই শিশুদের কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের জন্য প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন মেয়াদে প্রবেশন দিয়ে সত্যিই ইতিবাচক কাজ করেছেন।
কারাগার বা শিশু সংশোধনাগারে পাঠালে তাদের সংশোধন হওয়ার সুযোগ কম। আমাদের যে কটি কিশোর সংশোধনাগার আছে, তার প্রত্যেকটি নিয়ে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কোনো কোনো কেন্দ্রে শিশুদের মারধর করা হয়। এমনকি কর্মীদের সঙ্গে মারামারিতে শিশুর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।