সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কলেজগুলোকে সংশ্লিষ্ট জেলা ও বিভাগীয় শহরে অবস্থিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নিয়ে আসার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গত সাত বছরের অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নেওয়া দরকার।
২০১৭ সালে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজসহ ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। অধিভুক্তির পর এসব কলেজের পাঠ্যক্রম তৈরি, শিক্ষার্থী ভর্তি, পরীক্ষা গ্রহণ ও সনদ প্রদানের দায়িত্ব নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগপর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন।
কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়া সাত কলেজকে পুনরায় অধিভুক্ত করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত অনেকবার রাস্তায় নেমেছেন। তাঁদের প্রধান দাবির মধ্যে ছিল সঠিক সময়ে পরীক্ষা গ্রহণ, উত্তরপত্রের ন্যায্য মূল্যায়ন, যথাসময়ে পরীক্ষার ফল প্রকাশ এবং আলাদা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ।
অনেকের স্মরণে থাকতে পারে, অধিভুক্তির প্রথম বছরেই পরীক্ষার রুটিন প্রকাশের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজের একজন ছাত্র পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে দুই চোখ হারান। তখন অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ২০০ ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরও করে শাহবাগ থানার পুলিশ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নানা সময়ে স্বীকার করেছে, সাত কলেজের দুই লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি ছিল না। সাত কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা করবে কোন শাখা—শুরুর দিকে তা নির্ধারণ করতেও দেরি হয়েছে। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিল জনবলসংকট, যা এখনো দূর হয়নি। দূর হয়নি কক্ষসংকট; এ কারণে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করা এবং উত্তরপত্র সংগ্রহ, বণ্টন ও সংরক্ষণ করা রীতিমতো দুরূহ হয়ে পড়ে। নানা রকম সংকট থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ স্বল্পতম সময়ের মধ্যে অধিভুক্ত কলেজের জন্য পাঠ্যক্রম তৈরি করে দিতে সক্ষম হয়।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একেকটি বিভাগের পাঠ্যক্রম মোটামুটি চার থেকে পাঁচ বছর পরপর পরিমার্জন ও সংশোধন করা হলেও অধিভুক্ত কলেজের পাঠ্যক্রম কত বছরের জন্য প্রযোজ্য হবে, তার কোনো নির্দেশনা নেই। ফলে পাঠ্যক্রম প্রণয়নের শুরু থেকে তা চলছে কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়াই। এমনকি এখন পর্যন্ত অনেক অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোনো পাঠ্যক্রমে পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন।
বর্তমান পদ্ধতিতে অধিভুক্ত কলেজের পরীক্ষা কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিতে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা থাকেন। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের কাজটি তাঁরা সমন্বিতভাবে করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার দিন-তারিখ নির্ধারণ করে, প্রশ্ন ছাপানোর কাজটিও তারা করে। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় কলেজগুলোয়; কলেজের শিক্ষকেরা পরীক্ষা প্রত্যবেক্ষণের কাজটি করেন। ফলাফল প্রণয়ন ও প্রকাশের কাজটি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।