দেশে চিকিৎসাসেবার আওতা, চিকিৎসকের সংখ্যা, হাসপাতাল (সরকারি ও বেসরকারি), ওষুধ তৈরির কারখানা—সবই বেড়েছে। বেড়েছে রোগী, রোগ। বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু, যা দিয়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থার সাফল্য মাপা হয়। কিন্তু এখানে সব কথা বলা হলো না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈজ্ঞানিক জার্নাল উইলিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বাংলাদেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ খুশি নয়। অথচ এ দেশে চিকিৎসা খরচের ৭০ শতাংশ রোগী বা তার পরিবারকে বহন করতে হয়।
এ হিসাবেও গোলমাল আছে। স্বাস্থ্য খাতে সরকারের মোট ব্যয়কে মাথাপিছু বণ্টন করে একটি হিসাব কষা হয়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, অন্তত ২০ বছর আমি কখনো কোনো সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা নিইনি বা পাইনি। অথচ ৪৫ বছরের কর্মজীবনে আমি ২৮ বছর আয়কর দিয়েছি। প্রতি মাসে অন্তত দুবার কোনো না কোনো বেসরকারি করপোরেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সরকারি চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে ফি দিয়ে চিকিৎসক দেখাই। ক্লিনিকগুলো দস্তুরমতো চিকিৎসক-রোগী আর টেস্টের হাটবাজার।
রোগীর কথা শুনে বা না শুনে একগাদা টেস্ট, শেষে ব্যবস্থাপত্র। ব্যবস্থাপত্রে ৫ থেকে ১০ ধরনের ওষুধ। কোনো কোনো ব্যবস্থাপত্রে আরও বেশি। গত কয়েক বছরে চিকিৎসকের ফি বেড়েছে। ওষুধের দাম বেড়েছে। কিন্তু রোগীর অধিকার সুরক্ষায় দেশে সুস্পষ্ট কোনো আইন এবং হাতের কাছে কোনো কর্তৃপক্ষ কি আছে? না, বাংলাদেশে রোগীর অধিকার সুরক্ষার কোনো পৃথক আইন ও পৃথক কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।
অনেকে বলবেন বিএমডিসি বা বিএমএতে যান। প্রতিকার পাবেন। আইন সম্পর্কে বলবেন ভোক্তা অধিকার আইনের ২ (২২) ধারা, বিএমডিসি আইন ২০১০-এর সেকশন ২৩। পেনাল কোড ৩০৪। আর সংবিধানের ১৫, ১৮ ও ৩২ তো বহাল আছেই। একজন দরিদ্র রোগী এসব আইন ঘাঁটতে কয়জন আইনজীবীর কাছে যাবে। রোগ অদরিদ্রদের দরিদ্র করে। সাহসীকেও হতবল করে।
সুন্নতে খতনা করতে জীবন সংহার। এন্ডোসকপি করতে গিয়ে তরুণের মৃত্যু। বাঁ কানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ডান কানে অস্ত্রোপচার। প্রসূতি পেলেই পকেটের ওজন বুঝে সিজার। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে টেস্টের ফর্দ। ব্যবস্থাপত্রে জেনেরিক নামে ওষুধের নাম লেখা হয় না।