দেশ রূপান্তর : কিছুদিন পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিপীড়ন, বুলিং, র্যাগিংয়ের মতো বিষয়গুলো মাথাচাড়া দেওয়ার কারণ কী?
সুমন রহমান : এক কথায় এ বিষয়গুলোর কারণ নির্দেশ করা কঠিন। আমরা সার্বিকভাবে একটা মমতাশূন্য, সহিংস এবং বিবেচনাহীন সমাজে বাস করি। তার মধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সার্বিকভাবে একটা অপরাজনৈতিক সমাজব্যবস্থা এবং ঢিলেঢালা প্রশাসনিক কাঠামোর ভেতর পরিচালিত হয়। সমাজের সহিংসতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিফলিত হয়, আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এনক্লোজার সহিংসতার এজেন্টদের এক ধরনের ইমিউনিটি দেয়। তার সঙ্গে অপরাজনীতির ইন্ধন তো আছেই। ফলে দেখা যায়, নিজ গ্রামে বা পাড়ায় যাকে আমরা অতিশয় ভদ্র মানুষ হিসেবে জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরে সেই অচেনা হয়ে উঠছে, অনাকাক্সিক্ষত আচরণ করছে।
দেশ রূপান্তর : সার্বিক পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভূমিকা কেমন দেখতে পান?
সুমন রহমান : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোনো সমরূপী বর্গ নয়। বেশিরভাগ শিক্ষকই তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের ঘেরাটোপে থাকেন। যেটা তার মূল দায়িত্ব- অর্থাৎ জ্ঞান বিতরণ তিনি সেটা তার সাধ্যমতো করে থাকেন। কিন্তু এর বাইরে আরও একদল শিক্ষক থাকেন, যারা ক্ষমতাকাঠামোর অংশ। তাদের হাতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ভার। সেই ভার বহনে তারা নানাবিধ কারণেই অক্ষম এবং অনিচ্ছ। সার্বিকভাবে এই বর্গের ভাবমূর্তিকে গোটা শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তি মনে করা হয়। কাজেই এখন বলতেই হবে যে, শিক্ষক সমাজের ভূমিকা হতাশাজনক এবং ক্ষেত্রবিশেষে লজ্জাকর।
দেশ রূপান্তর : শিক্ষক ও ছাত্ররাজনীতির প্রভাব এবং বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনার দায় কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
সুমন রহমান : আগেই বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটা অদ্ভুত কেমেস্ট্রি। এর দায়িত্বে যারা থাকেন তারা দুরকমের হন : হয় গু-াগার্দির ট্র্যাক রেকর্ড আছে এমন কেউ, না হলে ঠুঁটো জগন্নাথ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বা বাইরে এই প্রশাসনের কোনো জবাবদিহি আছে এমন প্রমাণ পাই না। যেহেতু এই প্যাট্রন-ক্লায়েন্ট রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আজকে যিনি শিক্ষক, গতকাল তিনি ছাত্রনেতা বা পাতিনেতা ছিলেন। ফলে, ছাত্রাবস্থায় তিনি বা তারা যে অপরাজনীতির খোঁয়াড়ে ছিলেন, শিক্ষকজীবনে এসে এর থেকে বাইরে আসার ক্ষমতা এবং সদিচ্ছা কোনোটাই তাদের থাকে না। এই রাজনীতির প্রতি বশ্যতাই তাকে শিক্ষক বানিয়েছে। ফলে একে তিনি সার্ভ করে যেতে বাধ্য। ফলে তিনি যে শিক্ষক-রাজনীতি করছেন, সেটি তার ছাত্ররাজনীতিরই এক্সটেনশন মাত্র। অর্থাৎ তিনি একই রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যেই বসবাস করছেন, শুধু তার পরিচয় বা এফিলিয়েশন বদলেছে মাত্র। মানুষটি একই আছেন।