২০২৪ সালের ২ মার্চ। মধুপুর শালবনে প্রকৃতির সম্পূর্ণ ধ্বংসের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। প্রায় ৩০ বছর আগে রোপণ করা একটি মাত্র গাছ—রাবারের মনোকালচার, প্রতিদিন শয়ে শয়ে কাটা হচ্ছে। গাছ কাটার পর সেগুলো টুকরো টুকরো করে ট্রাকে তোলা হচ্ছে এবং দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। জ্বালানি, বোর্ড তৈরি, ইট পোড়ানো ও অন্যান্য কিছু কাজে ব্যবহার হবে এ কাঠ। যা থাকছে তা হলো মোথা, যা শিগগিরই দ্বিতীয় আবর্তের রাবার চাষের জন্য উপড়ে ফেলা হবে। রাবারের সঙ্গে সঙ্গে কয়েক বছর ধরে এখানে চাষ হবে আনারস ও অন্যান্য ফসল।
মধুপুর শালবনের মাঝে সন্তোষপুর ও পীরগাছা রাবার বাগানে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কাটা হচ্ছে রাবার গাছ। রাবার এমন একটি বিদেশি গাছ, যা আমাজন রেইনফরেস্ট থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে। যদি রাবার কষের জন্য বাণিজ্যিকভাবে রাবার গাছ রোপণ করা হয়, তবে সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ বছর শেষে তা কেটে ফেলতে হবে। একটি রাবার গাছ প্রায় ২৬ বছর ধরে কষ দেয় এবং তারপর এটি পুরোনো ও অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়ে এবং তখন তা কেটে ফেলা হয়।
টাঙ্গাইল-শেরপুর রাবার জোনের পাঁচটি বাগানের মধ্যে দুটিতে রাবার কাটার কাজ শুরু হয়েছিল গত বছর, যখন সন্তোষপুরে ৫৫ একর জমির নয় হাজার ও পীরগাছা রাবার বাগানের ৫৫ একর জমির সাত হাজার রাবার গাছ কাটা হয়। এরপর বাগান দুটির প্রতিটিতে ১২ হাজার ৩৭৫টি রাবারের চারা রোপণ করা হয়। রাবারের চারাসহ জমি লিজ নিয়ে এখানে চাষ হচ্ছে আনারস ও অন্যান্য ফসল।
এ বছর পীরগাছা রাবার বাগানের ১৫০ একর জমি থেকে ১৩ হাজার ৫৬৪টি ও সন্তোষপুর রাবার বাগানের ১৫০ একর জমি থেকে ২৫ হাজার ৯০০টি রাবার গাছ কাটার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।
মধুপুর-শেরপুর জোনে আট হাজার ১২৮ একর বনভূমিতে বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফআইডিসি) ব্যবস্থাপনায় পাঁচটি রাবার বাগান রয়েছে এবং অন্যান্য এলাকায় আছে আরও ১৪টি রাবার বাগান। এই পাঁচটি বাগানের মধ্যে চারটি মধুপুর শালবনের সাত হাজার ৫০৩ একর এলাকাজুড়ে।
মধুপুর শালবনে প্রথম রাবার গাছ লাগানো হয় ১৯৮৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাবার চাষ উদ্বোধন করতে হেলিকপ্টারে করে মধুপুরে যান। তিনিই মধুপুরে প্রথম রাবার গাছটি রোপণ করেন। এ এলাকার সব রাবার গাছ কাটা হলেও এ গাছটিকে সাজিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফআইডিসি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মধুপুরে প্রথম গাছ লাগানোর পর থেকে এ জোনের পাঁচটি বাগানে প্রায় ২০ লাখের মতো রাবারের চারা রোপণ করা হয়।