ব্যর্থ রাষ্ট্র বলে একটা কথা আছে। এই কথা অনেক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। বেশ কিছুদিন আগে আমরা একবার শুনেছি, কম্বোডিয়া একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র, জিম্বাবুয়ে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র। তারও আগে সোমালিয়াকে বলা হতো ব্যর্থ রাষ্ট্র। আমরা কখনো–সখনো পাকিস্তানকেও ব্যর্থ রাষ্ট্র বলি।
বাংলাদেশের ব্যাপারেও বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে এই বলে যে তারা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানিয়ে দিয়েছে বা বানানোর চেষ্টা করেছে। প্রশ্ন হলো, কোনো একটা রাষ্ট্রকে আমরা কেন ব্যর্থ রাষ্ট্র বলি? একটা রাষ্ট্র গঠনের পেছনে বেশ কিছু উদ্দেশ্য থাকে। রাষ্ট্র একটা সংগঠন। এই সংগঠনে অনেক ব্যক্তি সমবেত হন। এখন এই সংগঠন যদি ব্যক্তির কাজে লাগে, তাহলে তাঁরা সংগঠনটিকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করেন, যাতে করে তাঁরা এ থেকে আরও বেশি করে উপকার পান।
আর যখন দেখবেন, যে উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র গঠন করা হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে না, তখন তাদের মধ্যে অতৃপ্তি, ক্ষোভ, হতাশা দেখা দেবে। রাষ্ট্র এই অর্থে ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়। অর্থাৎ রাষ্ট্রকে যে জাগতিক বিষয়গুলো নাগরিকদের কাছে সরবরাহ করার কথা, সেখানে যদি ঘাটতি থাকে, তাহলেই ব্যর্থতার প্রশ্নগুলো ওঠে। ঘাটতির পরিমাণ যত কমে আসবে, মানুষ ততই রাষ্ট্রকে সফল বলে ভাবতে পারে। ঘাটতির পরিমাণ যতই বাড়তে থাকবে, ততই মানুষ বলবে রাষ্ট্র ক্রমাগত ব্যর্থ হচ্ছে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র ৫৩ ছাড়িয়ে ৫৪-তে পড়ছে। পাঁচ দশক কিন্তু একটা রাষ্ট্রের জীবনে কম নয়। একসময় আমরা পাকিস্তানের মধ্যে ছিলাম। সেই রাষ্ট্রের ২৩ বছর না যেতেই আমরা অতৃপ্ত ও ক্ষুব্ধ হয়ে আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশ অর্জন করি। এ ক্ষেত্রে প্রধান যুক্তিটা ছিল যে পাকিস্তান আমাদের জন্য ব্যর্থ রাষ্ট্র ছিল। অর্থাৎ পাকিস্তান রাষ্ট্র, আমাদের জনপদের যে জনগোষ্ঠী যেটা আশা করেছিল, সেটা দিতে পারেনি।
আমরা পাঁচ দশকের বেশি সময় আগে যে রাষ্ট্রটি তৈরি করেছি, সেটা কতটুকু সামনের দিকে যাচ্ছে অথবা আদৌ যাচ্ছে কি না অথবা বারবার তার উত্থান-পতন হচ্ছে কি না, সেটাই মূল প্রশ্ন। অথবা আমরা যদি বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি কোন দিকে যাচ্ছে, তার একটা লেখচিত্র আঁকি, তাহলে সেই রেখাটি কি ঊর্ধ্বগামী নাকি ভূমির সঙ্গে সমান্তরাল নাকি নিম্নগামী হচ্ছে?
এটা বুঝতে হলে আমাদের কতগুলো নির্ণায়ক ব্যবহার করতে হয়। এই নির্ণায়কগুলো বাছাই করার ক্ষেত্রে শাসকদের একধরনের চালাকি বা মুনশিয়ানা থাকতে পারে। আমরা যদি বলি, ১৯৭২ সালে দেশে এতগুলো বিদ্যুতের খুঁটি ছিল, আর এখন তা বেড়ে এত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারব আমাদের এক শ, দুই শ, হাজার গুণ বেড়ে গেছে। কিন্তু এই নির্ণায়কগুলো ব্যবহার করে আমরা একধরনের ঊর্ধ্বগামী রেখা দেখাতে পারি।