আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কী হয়েছে? সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক অপকর্মে বা অঘটনে কে বেশি আলোচনায় থাকবে তা নিয়ে যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন হলো, যৌন হয়রানি বা ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনা কেন বারবার ঘটছে? শুধু তা-ই নয়, এখানে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে গেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও আরও বিশ্ববিদ্যালয়ের পর আলোচনায় এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
ফাইরুজ অবন্তিকা নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী গত রাতে আত্মহত্যা করেছেন। মৃত্যুর আগে ২৪ বছর বয়সী এ তরুণী একটি সুইসাইড নোট লিখে গিয়েছেন। সেখানে তিনি তাঁর একজন ব্যাচমেট বা সহপাঠী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টরকে তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী করে গেছেন।
তিনি সুইসাইড নোটে লিখেছেন—‘আমার উপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনো সলিউশন না, কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেসে না বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইসিলাম!...এটা সুইসাইড না, এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার।’
আত্মহত্যা অবশ্যই হত্যা। সেই হত্যা ব্যক্তি নিজেকে নিজেই করে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যার কারণে দেশের আইনে আত্মহত্যা একটি অপরাধ। আত্মহত্যাচেষ্টাকারীর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ারও বিধান আছে। এর বাইরেও আত্মহত্যা কেন হত্যা, এ নিয়েও সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে আলোচনা আছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিষণ্নতা বা বিষাদগ্রস্ততাই হচ্ছে আত্মহত্যার সবচেয়ে বড় কারণ। বিশ্বজুড়ে ২০–২৪ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণও আত্মহত্যা।
এখন এই বিষাদগ্রস্ততা কোনো কুকি বিস্কুট নয় যে যেটি কেউ খেয়ে ফেলল আর মরে গেল! পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র—সবকিছুই তো এখন বিষাদগ্রস্ততা সরবরাহের পাইপলাইন। যার কারণে আদর্শবাদী রাজনীতি আত্মহত্যার জন্য যতটা না ব্যক্তিকে দায়ী করে, তার চেয়ে বেশি পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রের দিকেই আঙুল তোলে। এসবই কোনো না কোনোভাবে ব্যক্তিকে বাধ্য করে আত্মহত্যা করতে।
অবন্তিকার সুইসাইড নোট পড়ে যে কারও ধারণা হবে, তাঁকে আসলে আত্মহত্যা করতে বাধ্যই করা হয়েছে। এক সহপাঠীর নাম ধরে তিনি বলছেন, ‘আমার ক্লাসমেট ইভটিজারটা আমাকে এটাই বলছিল যে আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে, যাতে আমি মরা ছাড়া কোনো গতি না পাই। তা-ও আমি ফাইট করার চেষ্টা করসি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সহ্য ক্ষমতার।’
ওই সহপাঠীর পক্ষ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকারী প্রক্টরও কী পরিমাণ তাঁকে ধারাবাহিক মানসিক নিপীড়ন চালিয়ে গেছেন, এমন অভিযোগ সুইসাইড নোটটিতে গুরুতরভাবেই আমরা দেখতে পাই। অবন্তিকার মায়েরও অভিযোগ বিচার না পেয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন তাঁর মেয়ে।