সোজা কথা সোজাভাবে বোঝা কিন্তু সোজা কথা না। অনেক সময় খোঁজাখুঁজি করে সোজাসুজি কথার কুল না পাওয়ায় ভুল বোঝাবুঝি হয়। তখন সোজা কথাও প্যাঁচের কথা হয়ে দাঁড়ায়। কথায় কথা বাড়ে। সেই কথা তখন পদে পদে বিপদ আনে।
এই সোজা কথাটা যাঁরা সোজাভাবে গিলতে পেরেছেন, তাঁদের মধ্যে সাতক্ষীরার সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফ মাহমুদ সম্ভবত প্রথম সারিতে আছেন।
কথার জবাব না দিয়ে কীভাবে কায়দা করে কথা বাড়ানো এড়ানো যায়, তার মারাত্মক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন আরিফ মাহমুদ। সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করলে কীভাবে সেকেন্ডের মধ্যে সাময়িক বাক্প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে হয়, তার নিনজা টেকনিক তিনি জাতিকে শিখিয়ে দিয়েছেন।
বোবার শত্রু নাই—এই তত্ত্বে বিশ্বাসী সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য অনন্য শিক্ষণীয় আরিফ মাহমুদের সেই কালজয়ী মূকাভিনয় শৈলীর ভিডিওচিত্র ফেসবুক-ইউটিউবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ঘটনা হলো: সাতক্ষীরার একটি সড়কের কাজের অনিয়ম নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সরেজমিন প্রতিবেদন করছিল।
সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা আঙুলের ঠেলায় সড়কে বসানো পিচসহ খোয়া তুলে ফেলছিলেন। তাঁরা বলছিলেন, ঠিকাদার অতি অল্প পরিমাণের ও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে এই রাস্তা করেছেন। তাতে সড়ক ও জনপথের কেউ বাধা দিচ্ছে না। অর্থাৎ সেখানে অনিয়ম হচ্ছে; অর্থাৎ ঘাপলা হচ্ছে; অর্থাৎ চুরি হচ্ছে।
তো, ঠিক সেই সময় ঘটনাস্থলে কাজের অবস্থা দেখতে গিয়েছিলেন, প্রকৌশলী আরিফ মাহমুদ।
এই সময় টেলিভিশন চ্যানেলটির সাংবাদিক বুম হাতে আরিফ মাহমুদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, এই যে রাস্তার কাজে যে ধরনের কাজকারবার চলছে, সে বিষয়ে তাঁর বক্তব্যটা কী?
সাংবাদিককে লক্ষ্য করে আরিফ মাহমুদকে বলতে শোনা গেল, ‘কথা বাড়াইয়েন না। আমি আপনার কোনো কথারই উত্তর দেব না। (এ বিষয়ে কথা বলতে) আমার দপ্তর প্রধানের পারমিশন লাগবে। দেন (তখন), আমি কথা বলতে পারব।’
সাংবাদিক একটু ঘাবড়ে গেলেন বলে মনে হলো। তবে নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বললেন: ‘এই যে কাজটা যে ঠিকমতো হচ্ছে না...’
আরিফ মাহমুদ: আমি আমারটা বুঝছি। আপনি কথা বাড়াইয়েন না। আপনি কথা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। সাংবাদিকেরা এটাই করে। আমার কথা বলার দরকার নাই।
সাংবাদিক: এই যে রাস্তার পিচ, হাতের ঘষা, পায়ের ঘষাতেই উঠে যাচ্ছে...।