আমাদের কোষাগারে যতই ডলারের টান পড়ছে, ততই আমাদের আমদানির তালিকা লম্বা হচ্ছে। আমদানির খাতায় নতুন নাম যুক্ত হয়েছে নারকেল। পান, শজনে, কচুলতির সঙ্গে এখন নারকেল আসছে ট্রাকের পর ট্রাক।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুই ট্রাকে মোট ৫০ টন নারকেল প্রথমবারের মতো হিলি স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড চত্বরে খালাস হয়। এক হাজার বস্তায় সুদূর তামিলনাড়ু রাজ্যের এনায়েতপুর এলাকা থেকে আমদানি করা হয় এসব নারকেল। এটি ছিল মোট ২০০ টনের প্রথম চালান, আরও ১৫০ টন আসছে। বলা বাহুল্য, দেশে নারকেলের চাহিদা পূরণের জন্যই এই অপ্রচলিত আমদানি।
চাহিদা কত
চাহিদা কত, জোগান কত তার কোনো বস্তুনিষ্ঠ হিসাব কারও কাছে নেই। পরিসংখ্যান নিয়ে আমাদের খাবি খাওয়ার ইতিহাস বহু প্রাচীন। একবার এক দাপুটে কৃষিমন্ত্রী পরিকল্পনা কমিশনের সভায় প্রকাশ্যে এ বিষয়ে তাঁর হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন। মাননীয় মন্ত্রীর তিরস্কার বা হতাশায় সংশ্লিষ্টরা সাময়িক মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলেও পরিস্থিতির খুব একটা রকমফের হয়নি। তেমনটা হলে হালের খাদ্য গ্রহণে মাথাপিছু ব্যয়ের হিসাব নিয়ে বিতর্কের জটলা পাকত না।
সচেতন পাঠকের নিশ্চয়ই মনে আছে, আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণে গড় মাথাপিছু ব্যয় মাসে ১ হাজার ৮৫১ টাকা। তাদের মতে, এটিই ‘ফুড পোভার্টি লাইন’ বা খাদ্য দারিদ্র্যসীমা। অন্যদিকে বিশ্বখাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) হিসাবে, গত ডিসেম্বরজুড়ে একই খাদ্য গ্রহণে ব্যয় করতে হয়েছে মাথাপিছু ২ হাজার ৭৯৯ টাকা।
দেখা যাচ্ছে, বিবিএসের মাথাপিছু ন্যূনতম খাদ্য গ্রহণের ব্যয় ডব্লিউএফপির তুলনায় ৩৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ বা ৯৪৮ টাকা কম। পরিসংখ্যান পণ্ডিতেরা ৪ থেকে ৫ শতাংশ পরিসংখ্যান চ্যুতিকে গ্রহণযোগ্য মনে করলেও প্রায় ৩৪ শতাংশ গরমিলকে ‘গোঁজামিল’ বলেই মনে করবেন। গোঁজামিলের পরিসংখ্যান দিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন আর আন্দাজে ঢিল মারার মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই।
যা-ই হোক, নারকেলের কথায় ফিরে আসি। ডাব-নারকেলের যে একটা ঘাটতি দেশে তৈরি হয়েছে, তা কোভিডের কাল থেকেই টের পাওয়া যাচ্ছিল। সে সময় ডাবের দাম একঝটকায় বেড়ে যায়। দফায় দফায় অভিযান চালিয়েও সেটা আর কমানো সম্ভব হয়নি।