২০২৪ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবস জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের দিকে আমাদের অবিরাম যাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত এবারের থিম বা প্রতিপাদ্য হলো "নারীদের জন্য বিনিয়োগ করুন: অগ্রগতি ত্বরান্বিত করুন" ("Invest in women: Accelerate progress”)। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত এবারের প্রতিপাদ্য হলো "নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ"।
এই প্রতিপাদ্য বিশ্বব্যাপী নারী ও কন্যাশিশুরা যে সার্বক্ষণিক বৈষম্য এবং চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে তা মোকাবিলায় সম্মিলিত পদক্ষেপের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। থিম বা প্রতিপাদ্যটি নারীর ক্ষমতায়নে বিনিয়োগের গুরুত্বের ওপর জোর দিচ্ছে। নারীদের সমাজের সব ক্ষেত্রে সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা বিকশিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কেবল একটি দিনের উদযাপন নয় বরং নারীদের সমতা, ন্যায়বিচার, এবং অধিকারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চলা সংগ্রামের প্রতীক। এ সংগ্রামের মূলে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস, যা ২০ শতকের শুরুর দিকে নারীর অধিকার এবং ভোটাধিকার আন্দোলনের সাথে জড়িত।
১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রথম পালিত হয়। এটি ছিল সোশ্যালিস্ট পার্টির আয়োজিত একটি অনুষ্ঠান, যা ১৯০৮ সালের গার্মেন্টস শ্রমিকদের ধর্মঘটের স্মরণে পালিত হয়েছিল। এই ধর্মঘটে হাজার হাজার নারীকর্মী কর্মপরিবেশের নাজুক অবস্থা, কম বেতন, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের অভাবে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
১৯ শতকের শেষ দিকে এবং ২০ শতকের শুরুর দিকে, নারীরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য ও অবিচারের শিকার ছিল। তাদের ভোটাধিকার, শিক্ষার অধিকার, কর্মক্ষেত্রে সমতা এবং পুরুষদের সমান অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য নারীরা বিশ্বব্যাপী ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন শুরু করে।
পরবর্তী বছর, ১৯১০ সালে, ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক মহিলা সম্মেলনে নারীদের ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বর ওঠে আসে। বিশ্বব্যাপী নারীদের সমান অধিকার ও ভোটাধিকার প্রচারের জন্য একটি বার্ষিক আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। এ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছিল, যা নারীদের অধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত।