পলিসিগত জায়গা থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে স্পষ্ট কিছু পার্থক্য রয়েছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র যেখানে পুরোপুরি পুঁজিবাদী অর্থনীতি, অন্যদিকে চীনের অর্থনীতি পুরোপুরি সরকার নিয়ন্ত্রিত। নানা ত্রুটি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র একটি গণতান্ত্রিক দেশ। পক্ষান্তরে চীন একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দেশ, যেখানে কোনো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বলে কেউ নেই। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ হওয়া সত্ত্বেও ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক ক্ষমতাবলে মার্কিন আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে চীন।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের নীতিমালায় কিছু সাদৃশ্যও রয়েছে, যার ফলে ক্রমেই তাদের দ্বন্দ্ব বেড়েছে। বিশ্বপরিসরে অবস্থানের আপাত ক্ষয়ের কারণে আরো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা নীতিগুলোয় এর প্রভাব পড়ছে। তাদের গৃহীত নীতিমালা মূলত দশক আগে চীনের নীতিমালারই যেন প্রতিচ্ছবি। চীনের পরিকল্পনায় একসময় মুক্তবাজার অর্থনীতির ওপর অগ্রাধিকার পেয়েছিল জাতীয় অর্থনীতি শক্তিশালীকরণ এবং নবায়ন। আমেরিকার বর্তমান নীতিমালা স্ববিরোধী এবং তা চীনের জন্য সুবিধাজনক। ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উত্তেজনা বহু গুণে বাড়ছে।
যদিও চীন ১৯৭৮-পরবর্তী সময়ে বাজার অর্থনীতির দিকে ঝুঁকেছে এবং উল্লেখযোগ্যভাবে অর্থনীতিকে মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে ধাবিত করেছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নীতিগুলো অর্থনৈতিক অগ্রগতির আশাতীত প্রতিফলন দেখিয়েছে। চীনকে পুনরায় প্রধান ক্ষমতাসীন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে গৃহীত জাতীয় নবায়নযোগ্য পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত ছিল ওই নীতিমালাগুলো। পরিকল্পনা অনুযায়ী চীন নিজস্ব নিয়মে বিশ্বায়নের পথে অগ্রসর হয়েছে। নিজেদের শিল্প খাতকে রক্ষা করেছে এবং উত্তরণে সহায়তা করেছে। বিপরীতে বাইরের বাজারগুলোকে স্বাধীনতাও দিয়েছে। দেশটি কখনই বাণিজ্যিক কিংবা জাতীয় নিরাপত্তা বিবেচনায় পরিকল্পিত শিল্প খাতের অগ্রগতির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণে ও ভর্তুকি প্রদানে পিছপা হয়নি।
একজন চীনা নীতিনির্ধারক এ কৌশলকে পর্দাবৃত খোলা জানালা হিসেবে বর্ণনা করছেন, এমনটি শুনেছিলাম একবার। এ কৌশলের মাধ্যমে চীনা অর্থনীতি নির্মল বাতাস পাবে—বিদেশী প্রযুক্তি, বিশ্ববাজারে প্রবেশাধিকারসহ অন্য প্রভাববিস্তারকারী জোগানগুলো। একই সঙ্গে এটি স্বল্পমেয়াদি পুঁজিপ্রবাহকে অস্থিতিশীল ও অতিরিক্ত প্রতিযোগিতায় ঊর্ধ্বমুখী শিল্প সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বা শিল্পনীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের সক্ষমতার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে—এমন ধরনের ক্ষতিকারক উপাদানগুলোকে দূরে রাখবে। চীনের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শেষ পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি বড় আশীর্বাদ ছিল। যেহেতু দেশটি অন্যান্য দেশের ফার্ম ও বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় বাজার তৈরি করেছে। এছাড়া দেশটির সবুজ শিল্পনীতিগুলো বিশ্বে স্বল্প কার্বন নিঃসরণে ভূমিকা রেখেছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে সৌর ও বায়ুশক্তির মূল্য হ্রাস করায়।