বাংলাদেশে এখন অনেকেই মনে করছেন হিজাব ও বোরকা ইসলামের ব্র্যান্ড এবং এগুলো যে মেয়েরা ব্যবহার করেন না, তারা ভালো মেয়ে নয়। সম্ভবত এরকম একটি ধারণার বশবর্তী হয়েই হয়তো মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার সৈয়দপুর আব্দুর রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজে হিজাব না পরার দায়ে ক্লাসেই ৯ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দিয়েছেন ওই স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষিকা। শুধু তাই নয়, হিজাব না পরার জন্য ছাত্রীদের বকাঝকাও করা হয়েছে।
নির্যাতিত অভিভাবকদের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তাতে মনে হলো অভিযুক্ত ওই শিক্ষিকা আধুনিক বিজ্ঞানের নয়, বরং প্রাগহৈতিহাসিক কোনো চরিত্র। ছাত্রীদের চুলে যেমন খুশি তেমন কাঁচি চালিয়েছেন ওই শিক্ষিকা। ফলে মেয়েরা এখন ওইভাবে বাইরেও বের হতে পারছে না। চুল কাটার সময় তারা কান্নাকাটি করে ও শিক্ষিকার পা ধরেও রেহাই পায়নি। উপরন্তু তাদের প্রতি উপহাস ও হাসাহাসি করা হয়। এতে মেয়েরা লজ্জা পেয়ে আরও কান্নাকাটি করে। অন্য কোনো শিক্ষকও চুল কাটা থামাতে আসেননি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. ফরিদ আহমেদ জানিয়েছেন, ‘হিজাব পরার মৌখিক নির্দেশনা আছে। কোনো লিখিত নির্দেশনা নেই। নীতি-নৈতিকতার কারণে আমরা হিজাব পরতে বলি। তবে বাধ্যতামূলক নয়। ২০-২৫ শতাংশ পরে না।’ (ডয়েচে ভেলে)।
প্রশ্ন হচ্ছে স্কুল-কলেজের মেয়েদের ড্রেসকোডে হিজাব পরার নির্দেশনা থাকলেও, হিজাব না পরার কারণে কি শিক্ষিকা তাদের চুল কেটে দিতে পারেন? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম হিসেবে হিজাব কি বাধ্যতামূলক করা যায়? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ড্রেসকোড কেমন হবে তা নিয়ে সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা আছে বলে আমাদের জানা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হিজাব পরার নির্দেশনা সরকার দেয়নি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও দেয়নি। সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো ধর্মীয় পোশাক ইউনিফর্মের অংশ হতে পারে না। কেউ পরতে চাইলে পরতে পারেন। কিন্তু আমি আজকাল এটা নিয়ে অসহিষ্ণুতা দেখি। যারা হিজাব পরে না তাদের অপদস্থও করা হয়। আবার হিজাব পরলেও তারা একই পরিস্থিতির শিকার হয়। পোশাকের স্বাধীনতা থাকা উচিত। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি হচ্ছে।’