দেশের শিশুমৃত্যুর বড় একটি কারণ হচ্ছে পানিতে ডুবে যাওয়া। গোটা দেশেই পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও কিছু কিছু এলাকায় এটি খুবই গুরুতর। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া উপজেলায়। ছয় বছরে সেখানে পুকুরে ডুবে তিন শ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী ও অভিভাবকেরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
কুতুবদিয়া উপজেলায় ছয়টি ইউনিয়নের লোকসংখ্যা ১ লাখ ৫৭ হাজার। পরিবারের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। তবে পুকুর আছে ১৪ হাজারের বেশি। অনেকটা বলা যায় যত বাড়ি, তত পুকুর। এর মধ্যে অন্তত ১০ হাজার ৪৫০টি পুকুর অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। এসব অরক্ষিত পুকুর হচ্ছে উপজেলার কৈয়ারবিল, লেমশিখালী, উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং, আলী আকবরডেইল ও বড়ঘোপ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামে। এসব পুকুরের চারপাশে নেই কোনো ঘেরা বা বেড়া। শিশুরা সহজেই সেসব পুকুরে যেতে পারে এবং এতে মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটছে।
গত বৃহস্পতিবার কুতুবদিয়ায় একটি বেসরকারি সংস্থার আয়োজনে পুকুরে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন, এনজিও প্রতিনিধি, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা। এলাকাবাসীর অভিযোগের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি, শিশুমৃত্যু রোধে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সাঁতার শেখানোসহ কোনো ধরনের পদক্ষেপ সেখানে নেই। পরিবারগুলোও অসচেতন হওয়ায় বাড়ির পাশের পুকুরে বেড়া দেওয়া হয় না।
সেমিনারে ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, অরক্ষিত পুকুরগুলোতে দ্রুত বেড়া তৈরি, শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, সচেতনতা বৃদ্ধিতে মায়েদের নিয়ে উঠান বৈঠক, শিশুদের দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে ওয়ার্ড পর্যায়ে রেসকিউ টিম গঠন ও দ্রুত যোগাযোগের জন্য হটলাইন অ্যাপস চালুর তাগিদ তুলে ধরা হয়। এখন কথা হচ্ছে, এসব পরামর্শে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো কতটা গুরুত্ব দেবে?