এক সময় বই দেখা বলতে সিনেমা হলে গিয়ে চলচ্চিত্র দেখাকে বুঝানো হতো। সিনেমা ভাল লাগলে মানুষ বলতো- বইটা খুব ভাল, কাহিনীটা বড়ই চমৎকার। এরপর কাহিনীর ধারাবাহিকতা ছেড়ে সিনেমার পর্দায় নাচ-গান, মারপিট, যুদ্ধ, খুন-খারাবি সবকিছুই শুরু হয়ে যায়। কালের আবহে সিনেমার পর্দা থেকে মানুষের গোপনীয়তা ভঙ্গ করে টেলিভিশন, ভিসিআর, ভিসিপি ইত্যাদি এসে ঘরে ঘরে সিনেমার প্রদর্শন চালু করে দেয়। ইন্টারনেট যুগে প্রবেশের পর মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে মানুষের হাতে হাতে মিনি সিনেমার পর্দা ঠাঁই নিয়ে ফেলে। সেখানে সব কিছুই সিনেমার আদলে চোখের মণিকোঠায় ভেসে উঠলেও বইয়ের কাহিনী হারিয়ে যায় কালের গহব্বরে।
বই পড়া ও কেনা কিন্তু তখনও থেমে থাকেনি। আধুনিক ডিজিটাল যুগের ব্যস্ততার মধ্যেও বই পড়া বন্ধ হয়নি। শুধু বদলে গেছে পড়ার মাধ্যম ও ধরন। কমে গেছে পড়ার সময়। এখন দেখা যুগ শুরু হওয়ায় এবং দেখার সরঞ্জাম ও বিষয়াবলীর পরিমাণ অতি বেশি হওয়ায় দেখার মধ্যে গভীরতা কমে গেছে। একই সংগে দেখবে, না পড়বে তা বুঝে উঠতে অনেক মানুষের ভিমড়ি খাবার যোগাড়।
কয়েক যুগ আগে বই পড়া ছিল বড় আকর্ষণের বিষয়। আমাদের স্কুলছাত্র জীবনে একটি গল্পের বই বহু হাত ঘুরে পড়তে পড়তে আসল মলাট ময়লা হয়ে ছিঁড়ে যেত। সোভিয়েত ইউনিয়নের তেল চকচকে বাংলা পত্রিকার পাতা দিয়ে মলাট বেঁধে বই ও লেখকের নাম হাতে লিখে দেয়া হতো। তবুও বইটি বারোজনের হাত ঘুরে পড়া হতে থাকতো। পরিচিত সবার পড়া হয়ে গেলে সংরক্ষণের অভাবে বুট-বাদাম বা কটকটিওয়ালার কাছে সমাদরে বিক্রিও হয়ে যেত।