আজকের পত্রিকা: ইউপিএল তো এ দেশের প্রথম সারির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। আপনারা কীভাবে এ অবস্থায় পৌঁছালেন?
মাহ্রুখ মহিউদ্দিন: এই কৃতিত্ব প্রায় এককভাবে প্রাপ্য ইউপিএলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদের। লাহোরের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসে যুক্ত হন। স্বাধীনতার পর দেশে এসে কিছুদিন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের বাংলাদেশ শাখার দায়িত্ব নেন। এরপর এই শাখার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি দি ইউনিভার্সিটি প্রেস (ইউপিএল) প্রতিষ্ঠা করেন। অক্সফোর্ডে যে পেশাদারির প্রশিক্ষণ তাঁর হয়েছিল, সেটাই অব্যাহত রেখেছেন ইউপিএলে।কয়েকজন যোগ্য সহযোগী তিনি বেছে নিতে পেরেছিলেন। তাঁর পরিশ্রম, জ্ঞান ও সততার গুণে ইউপিএলকে তিনি একটা জায়গায় পৌঁছে দিতে পেরেছেন। আমরা সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করেছি।
প্রধানত ইউপিএল একাডেমিক ও গবেষণামূলক বই প্রকাশ করে। বাংলাদেশে অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এমন বিশেষায়িত কাজে যুক্ত আছে। প্রয়াত মহিউদ্দিন আহমেদের তৈরি করা এই ধারাটা ধরে রাখা এবং এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলা ভাষায় আরও বেশি করে জ্ঞানবিজ্ঞানের বই প্রকাশ করার উদ্যোগ আরেকটু বৃদ্ধি করা—এটুকুই আমাদের কৃতিত্ব।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে এত দিনেও প্রকাশনাশিল্পে পেশাদারি সৃষ্টি হলো না। কারণ কী?
মাহ্রুখ মহিউদ্দিন: এই প্রশ্নের দুটো উত্তর হতে পারে। এক. ইউপিএল সাধ্যমতো চেষ্টা করে প্রকাশনার সব মানদণ্ড বজায় রাখার। এই মানদণ্ডগুলো হলো—বিষয়বস্তু বাছাই, যথাযথ সম্পাদনা, লেখকের সঙ্গে পেশাদারি সম্পর্ক বজায় রাখা এবং কোনো রকম মেধাস্বত্ব আইন ভঙ্গ না করা। ফলে একদিক দিয়ে বলা যায়, পেশাদারি সৃষ্টি হয়নি, এ কথাটি ভুল।
দ্বিতীয় বিবেচনায়, বাংলাদেশে প্রকাশনার বাজার এত ছোট যে খুব বেশি প্রকাশকের পক্ষে পেশাদারি বজায় রাখা সম্ভব নয়। এমনকি ইউপিএলও এত ছোট বাজারে হিমশিম খায়। পেশাদারি প্রকাশনার মানদণ্ড হিসেবে যা যা বলেছি এর আগে, সবগুলোই অত্যন্ত ব্যয়বহুল।সাধারণ পাঠকের অর্থে বা ছোট বাজারে এগুলোর চর্চা কঠিন। ফলে প্রায়ই প্রকাশককে এর কোনো কোনো শর্ত ভাঙতে হয় টিকে থাকার জন্যই। এটার অবসানের ক্ষমতা প্রকাশকের হাতে নেই; বরং নীতিনির্ধারকেরা বইয়ের বাজার বৃদ্ধি করতে, বই কেনার দুর্নীতি বন্ধ করতে এবং অজস্র পাঠাগার তৈরি করে ভালো বইয়ের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে যেন বাধ্য হন, সেই বিষয়ে গণমাধ্যম আরও অনেক বেশি কার্যকর উদ্যোগ, অনুসন্ধান ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে। এর সুফল খানিকটা প্রকাশনাশিল্প ভোগ করবে, পুরো জাতি বেশি উপকৃত হবে।