দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী নিজেদের মতো কৌশলে পাড়ি দিয়ে একধরনের রাজনৈতিক স্বস্তিকর পরিস্থিতিতে আছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে নির্বাচনে সরকারি দলের কাছে কৌশলে হেরে যাওয়া প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বের দুর্বলতা নিয়ে নানা প্রশ্ন বিভিন্নভাবে উঠেছে। তবে সরকারি দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে মুহুর্মুহু যেসব রাজনৈতিক বক্তব্য আমরা শুনছি, তার সবই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলা। নির্বাচনে বিজয়ী হবার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অপরাপর গুরুত্বপূর্ণ সরকারদলীয় নেতা বিএনপি সম্পর্কে তাদের ক্ষোভ, অভিযোগ ইত্যাদি অবিরাম বলে চলেছেন। জাতীয় সংসদ অধিবেশন চলমান। সেখানে সরকারি দল ও বিরোধী দলের গঠনমূলক বিতর্ক প্রত্যাশিত। বাস্তবে তা কতখানি দেখা যাবে, তা সময়সাপেক্ষ হলেও কয়েকটি প্রসঙ্গ এখনই সামনে আসে।
এবার নিয়ে পরপর তিনবার, দেশের সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। অবশ্য ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বিরোধী দল জাতীয় পার্টির তিন সদস্যকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা অভূতপূর্ব মন্ত্রিসভা গড়বার রেকর্ডও গড়ে আওয়ামী লীগ। সারাবিশ্বেই এ ধরনের সরকার বিরল। ২০২৪ সালের সংসদে মাত্র ১১টি আসন নিয়ে সংসদে বিরোধী দল বনে যাওয়া জাতীয় পার্টির পায়ের নিচে মাটির সন্ধানে মিলবে– এর প্রতিটি আসন জাতীয় পার্টি পেয়েছে সরকারি দলের ছাড় দেওয়ার ঘোষণায়। এবং এই ছাড় ছিল জাতির সামনে প্রকাশ্যে– কোনো ধরনের লুকোছাপা ছিল না; ২৬টি আসনে বদান্যতা দেখালেও জাতীয় পার্টি আখেরে ১১ আসনে জিতে সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আওয়ামী লীগ, নিজেরাই নিজেদের আসন ছেড়ে দিয়ে কয়েকজন বিরোধী বাছাই করে, বলা যায়। এ ধরনের বদান্যতার ফলে পাওয়া জাতীয় পার্টির ‘বিরোধী চরিত্র’ সংসদে আদৌ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে অটল বিশ্বাসীরাও ভাবনায় স্থান দেবেন না। এ পরিস্থিতিতে সংসদে নির্বাচিত ৬২ জন স্বতন্ত্র সদস্যের দিকে প্রথম থেকেই অনেকে নজর রেখেছেন; তারা কেউ কেউ বা অনেকে মিলে কথা বলতে পারেন। তবে এদের অধিকাংশ আওয়ামী লীগেরই বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, কাজেই কতটা স্পষ্ট কথা তাদের পক্ষে বলা সম্ভব– এই শঙ্কার পাশাপাশি এটাও পরিষ্কার নয় যে, আদৌ স্বতন্ত্র সদস্যরা স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে চান কিনা! জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী মনে করেন, এবারের সংসদে স্বতন্ত্র সদস্যরা সরকারদলীয় নন। তিনি বলেছেন, ‘স্বতন্ত্ররা প্রায় সবাই নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করে এসেছেন। তারা হয়তো আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আছেন। মাঠে যখন তারা নির্বাচন করেছেন, তখন তারা নৌকার বিরুদ্ধে করেছেন। তারা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে যে কোনো কথা বা আপত্তির বিষয় সংসদে তুলতে পারবেন। তাদের ক্ষেত্রে ফ্লোর ক্রসিং বা ৭০ অনুচ্ছেদের বাধ্যবাধকতা অর্থাৎ দলের বিপক্ষে ভোট দিলে সংসদ সদস্য পদ হারানোর মতো বিষয় নেই।’ (প্রথম আলো, ১৫.০২.২৪) অবশ্য অধিবেশন শুরুর আগে সরকারপ্রধানের সাথে বৈঠক ও সরকারি দলের হুইপের হুইপিংয়ে তাদের কার্যক্রম চলমান থাকায় বোঝা যায়, স্বতন্ত্র সদস্যদের পক্ষে বিরোধী সদস্যের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া সহজ হবে না।