কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখেছিলেন, ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে? চিরস্থির কবে নীড়, হায়রে জীবন-নদে?’ প্রকৃতির নিয়ম মেনে মানুষের মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু এমনও কি কোনো মৃত্যু আছে যা মানুষের মনে দাগ কেটে রাখে জীবনভর? আছে। প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য তো শাহজাহান তাজমহল গড়েছিলেন, কিন্তু আজকের গল্পের নায়ক নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন স্ত্রীকে বাঁচাতে।
ঘটনাটি ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ, চৈত্রের এক দুপুর। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আলাউদ্দিন পাটোয়ারী তার সদ্যবিবাহিত স্ত্রী আইরিন সুলতানা লিমাকে নিয়ে রাঙামাটি বেড়াতে আসেন। ওই দিনই একটি ইঞ্জিনচালিত বোট নিয়ে তারা কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণে বের হন। কালবৈশাখীর মৌসুম হওয়াতে হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। মুহূর্তেই অশান্ত হয়ে ওঠে শান্ত কাপ্তাই হ্রদ। বাতাসের তীব্র বেগের কারণে তাদের নৌকাটি দুলতে শুরু করে। লিমা ভয় পেয়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্ত্রীকে বাঁচাতে আলাউদ্দিনও হ্রদের পানিতে লাফিয়ে পড়েন। একপর্যায়ে কাপ্তাইয়ের অথৈ জলে হারিয়ে যান তারা।
পরে তাদের খোঁজে শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। দু-দিন ধরে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাদের মরদেহ পাওয়া যায়নি। তৃতীয় দিন অর্থাৎ ২২ মার্চ সকালে রাঙামাটির অন্যতম পর্যটন-স্পট ঝুলন্ত ব্রিজের অদূরে তাদের মরদেহ ভেসে ওঠে। মরদেহ দুটি পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেছিল। দেখে মনে হয়েছিল, মৃত্যুও যেন তাদের আলাদা করতে পারেনি। ভালোবাসার এমন বিরল দৃশ্য পার্বত্য শহর রাঙামাটির মানুষদের আপ্লুত করেছিল। চোখের জল ঝরিয়েছিল সব বয়সী মানুষের।