পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে নিয়ে একটা কৌতুক বেশি প্রচলিত— ‘এ বাহিনী কখনো কোনো যুদ্ধে জেতেনি, কোনো নির্বাচনে হারেনি।’ কিন্তু এবারে তারা নির্বাচনেও হারল। ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে পাকিস্তানি সেনারা অতীতে যত ন্যাক্কারজনক অপকর্ম করেছে, এবার তার যাবতীয় রেকর্ড ভেঙ্গেছে। ইমরান খানসহ দলের অনেক শীর্ষ নেতা কারাগারে, বাকি নেতারা ফেরারি। শুধু তাই নয় পিটিআই-এর প্রতীক ‘ক্রিকেট ব্যাট’ও নিষিদ্ধ করেছে। এতকিছুর পরও ইমরানকে দাবিয়ে রাখতে পারল না সেনারা। সব হিসেব-নিকেশ উল্টে দিয়ে ইমরান সমর্থিত স্বতন্ত্ররা এবার বাজিমাৎ করেছে কল্পানাতীতভাবে।
এবারের নির্বাচনে ইমরান সমর্থকদের জয়ের নেপথ্যে প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে সোশ্যাল মিডিয়ার বহুমাত্রিক ব্যবহার। পাকিস্তানের এবারের নির্বাচনে সোশ্যাল মিডিয়ার সর্বগ্রাসী ব্যবহার বিশ্বব্যাপী নির্বাচনি ব্যবস্থাকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি নিজ অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট (টুইটার) থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে জাতির উদ্দেশ্যে তিন তিনবার ভার্চুয়াল ভাষণ দিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার এই অনৈতিক ব্যবহার আটকানোর মতো বিধি-ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশনের নেই। তবে এটার জন্য নির্বাচনি আইন কেন, প্রচলিত আইনই যথেষ্ট হওয়ার কথা! পৃথিবীর কোনো জেল কোড, পেনাল কোড, অন্যান্য আইন বা বিধিতে কনভিক্টেড আসামি পাবলিক স্পিচ দিতে পারে না। হোক সেটা এআই জেনারেটেড, কিন্তু প্রচার তো হচ্ছে ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট থেকে যার ইমপ্যাক্ট মোর দ্যান রিয়েল। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো মিডিয়া, সংস্থা বা ব্যক্তিত্ব এই অনৈতিক ব্যবহার নিয়ে আওয়াজ তুলছে না।
ইমরান খানের বিজয়ে আমি তাকে অভিনন্দন জানাতে পারি, সেটা ভিন্ন আলাপ। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার অনৈতিক ব্যবহারের যে উদাহরণ পিটিআই সৃষ্টি করল তা গণতন্ত্রের জন্য কতবড় হুমকি সেটা আমরা এখনও অনুধাবন করতে পারছি না।
গত ১০ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের দা’ভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম 'গ্লোবাল রিস্কস রিপোর্ট ২০২৪' ঘোষণা করেছে যেখানে ৩টি প্রধান বৈশ্বিক ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রধান ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে অপতথ্য ও কুতথ্যকে। দ্বিতীয় ঝুঁকি অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব এবং তৃতীয় ঝুঁকি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা।
রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০২৪ সাল বিশ্বব্যাপী নির্বাচনের বছর। এ বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৭৮টি দেশে হবে জাতীয় নির্বাচন। ভোট দেবেন বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ। সংখ্যার হিসেবে ৪২০ কোটির বেশি। সোশ্যাল মিডিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অপতথ্য ও কুতথ্য দিয়ে জনমতকে কলুষিত করা হবে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্যও প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।