অনেক দিন পর আমরা একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী পেয়েছি, যিনি তৃণমূল পর্যায়ে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবার বিস্তৃতি ঘটিয়ে বড় শহরকেন্দ্রিক স্বাস্থ্যসেবার ওপর চাপ কমানোর পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার ব্যাপারটি দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকেই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা। এ প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় অবস্থিত জেলা ও উপজেলা হাসপাতালকে সর্বোচ্চ কার্যক্ষম করে তুলতে হবে। বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রোমেন রায়হান পরিচালিত এক গবেষণার ফলাফলে আমরা দেখেছি, অধিকাংশ উপজেলা হাসপাতালে এক্স-রে, ইসিজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন নেই কিংবা থাকলেও কাজ করে না। হাসপাতালগুলোতে কাজের পরিবেশও মানসম্মত নয়। চিকিৎসকদের থাকার ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত। সব মিলিয়ে অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়ে রোগীকে চিকিৎসকের সেবা দিতে হয়। এসব হাসপাতালে মূলত গরিব রোগীরাই চিকিৎসার জন্য যান। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে তাই উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালকে পুরোপুরি সক্ষম করে তুলতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক সময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সুবিধার্থে হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জাম ইচ্ছাকৃতভাবেই ফেলে রাখা হয় বা নষ্ট হলে মেরামতে গাফিলতি করা হয়। এর ফলে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি চিকিৎসাপ্রত্যাশী সাধারণ রোগীদের ভোগান্তি বাড়ে। এর পাশাপাশি রয়েছে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাব।
বর্তমানে সারাবিশ্বেই হাসপাতালে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর আক্রমণের হার বাড়ছে। বাংলাদেশেও আক্রমণের হার অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণ বন্ধ করতে আগের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং অধিকাংশ চিকিৎসক নেতা কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেননি। প্রায় পাঁচ বছর আগে আমরা কয়েকজন চিকিৎসক মিলে ‘ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিজ (এফডিএসআর)’ গঠন করে কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর নিরাপত্তার দাবিতে সোচ্চার হলে দেশব্যাপী প্রতিবাদের একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়। প্রতিবাদের ক্ষেত্রটি বিস্তৃত হতে হতে এখন গণভবন পর্যন্ত পৌঁছেছে। বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাষ্য অনুসারে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত অনুধাবন করছেন, এভাবে হাসপাতালে ডাক্তাররা আক্রান্ত হতে থাকলে তারা কাজ করবেন কীভাবে?