বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ চাই

যুগান্তর ড. মো. রফিকুল ইসলাম প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:২২

আমাদের দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো কৃষি ও শিল্প। বিশেষত একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকটাই মুখ্য বিষয়। দেশ যদি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন নানামুখী ঝুঁকি প্রকট আকার ধারণ করে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি অন্যতম ঝুঁকি। বিশেষ করে আমাদের শিল্প উৎপাদনের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এক্ষেত্রে আমদানিকৃত দ্রব্যের বেশির ভাগেরই মূল্য ডলারের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। অন্যদিকে পণ্যদ্রব্য আমদানির কারণে এলসি দায় মেটাতে রিজার্ভ কমে যায়। ফলে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। এতে কমে যায় স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার মান। এদিকে যদি আমদানি করা পণ্য দেশে উৎপাদন করা সম্ভব হতো তাহলে আমদানির ওপর চাপ কমত ও ডলারের চাহিদাও তুলনামূলক কম হতো। সেক্ষেত্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখাও সম্ভব হতো।


বর্তমান ক্ষমতাসীন দল টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। দলটির এবারের নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টাই সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। বাণিজ্য, কৃষি, খাদ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয় পণ্যদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে এক হয়ে কাজ করছে। তবুও কিন্তু এর প্রভাব নেই বাজারে। তাছাড়া সরকারি সংস্থাগুলো পণ্যের যে মূল্য প্রকাশ করছে, এর সঙ্গেও বাজারে কোনো মিল নেই। চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যেও রয়েছে যথেষ্ট গড়মিল। তথাপি, দেশের বাজারে প্রতিদিন পণ্যমূল্যের তালিকা হালনাগাদ করার কথা থাকলেও বাস্তবে কিন্তু তা হচ্ছে না। অন্যদিকে কেনাবেচায় লিখিত রসিদ থাকার কথা থাকলেও তার হদিস মিলছে না। তাছাড়া চাহিদা অনুযায়ী আমদানি পণ্যের এলসি খোলা বা দেশে আনার যথাযথ বিষয়টির তদারকিও তেমন দেখা যাচ্ছে না। আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় কারণে-অকারণে। এক্ষেত্রে কোনো একটি অজুহাত পেলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বিশেষত বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান (রোজা, ঈদ, পূজা ইত্যাদি) ও জাতীয় বাজেট এবং দিবসে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করা যেন এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদেশে কিন্তু এর চিত্র উলটো, বিশেষ সময়ে বরং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমার প্রবণতা অনেক বেশি দেখা যায়। বিশেষভাবে লক্ষণীয়, শীত মৌসুমে সবজির বাজার সাধারণত রমরমা থাকা ও সহজলভ্যতার কারণে দাম কমে আসে; কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। কোনোভাবেই সবজির দাম কমছে না বরং ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তথাপি, দেশীয় সবজি হলেও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এগুলোর দামও তেল ও গ্যাসের সঙ্গে সমানতালে বাড়ছে। বর্তমানে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে সর্বস্তরের মানুষের হতাশা আর ক্ষোভের যেন অন্ত নেই।


অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমাদের দেশে যে পণ্যের দাম একবার বৃদ্ধি পায়, সে পণ্যের দাম আর কমে না বললেই চলে। পক্ষান্তরে মানুষের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে না; কিন্তু ব্যয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছে সবাই। এক্ষেত্রে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের সন্তানদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিয়মিত খাদ্য গ্রহণে কিছুটা কাটছাঁট করতে হচ্ছে। এদিকে দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এক কোটি চল্লিশ লাখের বেশি। এ প্রবীণ জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসা ও বাসস্থান ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্রয়োজন রয়েছে, যা সবার পক্ষে সংকুলান করা সম্ভব নয়। তারা প্রেসার, ডায়াবেটিস, কিডনি ও হৃদরোগসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই সুস্থতার জন্য তাদের খাদ্যদ্রব্যের চেয়ে বেশি জরুরি ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা। এদিকে আবারও বলা হচ্ছে, ওষুধের দাম আরও ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আমাদের মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশের কম। প্রকৃত অর্থে তা কিন্তু অনেক বেশি। মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি যদি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে, সে ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির প্রভাব সহনীয় মাত্রায় থাকে। অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি একটি অতিস্বাভাবিক প্রবণতা। অনিয়ন্ত্রিত মুক্তবাজার অর্থনীতির সুযোগ নিয়ে দেশের গুটিকয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক হারে মুনাফা করছে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। সুতরাং বাজার প্রতিযোগিতায় এসব প্রতিষ্ঠান পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য নির্ধারণে কারসাজির মাধ্যমে অধিকহারে মুনাফা অর্জন করছে। এ কারণ বাজারে অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল নয়। এক্ষেত্রে সরবরাহ সামান্য কমলেই ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। আবার কখনো ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, আদা, ডিম ও কাঁচামরিচ ইত্যাদি পণ্যের সরবরাহের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা যেন তাদের স্থায়ী সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us