গত ২৩ জানুয়ারি একটি দৈনিক পত্রিকার বড় শিরোনাম ছিল দেশে ‘সিন্দুকের বিক্রি বেড়েছে’। একশ্রেণির মানুষের মধ্যে টাকাপয়সা, সোনা-হীরা-মুক্তা ইত্যাদি রাখার জন্য সিন্দুক কেনার ধুম পড়েছে দেশে। শুধু এনালগ বা লোহার তালাচাবিমারা আদিকালের সিন্দুক নয়। তারা ডিজিটাল ও বায়োমেট্রিক নিরাপত্তাসংযুক্ত সিন্দুকও কিনছেন।
আদিযুগে সাদ্দাদ-কারুনদের সোনা-রুপা, মণি-জহরত রাখার হাজারো সিন্দুকের চাবি বহন করত ভারবাহী সুঠামদেহী গাধারা। শতাধিক গাধার পিঠে সেসব তালাচাবির বস্তা বহন করার কাহিনি গল্পকথায় পড়েছি, শুনেছি। সেই যুগ অতীত হয়ে মধ্যযুগের মানুষ মূল্যবান সম্পদ চোর-ডাকাতের ভয়ে মাটি বা পিতলের কলসিতে ভরে গোপনে মাটির নিচে পুঁতে রাখত। আবার কেউ কেউ ঘরের মধ্যে মোটা কাঠ অথবা লোহা দিয়ে বড় বড় খোলওয়ালা খাটপালঙ্ক তৈরি করে তার ভেতরে টাকাকড়ি, স্বর্ণমুদ্রা ভরে তালাচাবি মেরে রাতে ওপরে শুয়ে ঘুমাত। কারণ, তারা ছিল লুটেরা ও কৃপণ। সেসময় তরবারি, বন্দুক ও পেশির ভয় দেখিয়ে মানুষ কতল করে সম্পদ লুট করে নিজেরা ভোগদখল করত। এর অনেকদিন পর ব্যাংকে টাকা-সম্পদ রাখার বিধান তৈরি হওয়ায় সম্পদশালীরা হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে। কিন্তু সেই এনালগ তালাচাবির যুগও একবারে শেষ হয়ে যায়নি।
এখন ডিজিটাল যুগের ছোঁয়ায় কার্ডের মাধ্যমে সাংখ্যিক পদ্ধতির তালাচাবির ব্যবহার বেড়ে গেছে। আজকাল আঙ্কিক সংখ্যাকেও বশ করতে পটু এক ধরনের ডিজিটাল চোর বা হ্যাকাররা। তারা পাসওয়ার্ড চুরি বা উদ্ধার করে নকল কার্ড তৈরি করে ডিজিটাল ডাকাতি করা শুরু করেছে অতি সংগোপনে।
এরপর বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাতের আঙুলের ছোঁয়ায় তালা খোলার পদ্ধতি চালু হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে সেখানেও বেড়েছে বিপত্তি। তাই চালু করা হয়েছে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে মুখের অবয়ব, পরিচিত কণ্ঠের গোপন কমান্ড, আপন চোখের মণির ইশারা ইত্যাদি নানা কৌশলে তালাচাবি ব্যবহার করার প্রবণতা। শুরু হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাদানের প্রচেষ্টা। তবুও নিস্তার নেই। সব ধরনের ডিজিটাল ও বায়োলজিক্যাল নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে উভয়বিধ হ্যাকারদের স্কুল খোলা হয়েছে কোনো কোনো দেশে। এসব বিষয় এখন বিভিন্ন গোপন নিরাপত্তা সংস্থার মানুষের পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণেরও বিষয় হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে ফ্রান্সসহ উন্নত দেশগুলোতে। আর বাংলাদেশের উঠতি বিত্তশালীরা টাকা-পয়সা ও সোনদানা রাখার জন্য ব্যাংকের ওপর আস্থা রাখতে না পেরে নিজেরাই সিন্দুক কেনার ধুম তুলেছেন।