ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের বেশ কয়েকটি সভা তখন হয়েছিল। ১৯৫১ সালের ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন মকসুদ আহমদ। সেই সভায় ভাষা আন্দোলনের তহবিল সংগ্রহের জন্য ৫ এপ্রিল পতাকা দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত হয়।
ওই সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের প্রতিষ্ঠা। সে বছরের ১১ এপ্রিল পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্যদের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ একটি স্মারকলিপি পেশ করে। স্মারকলিপিতে লেখা হয়েছিল, ‘আমরা সেই সব চক্রান্তকারী এবং জনগণের সেই সব প্রতিনিধিদের, যাঁরা রাষ্ট্র পরিচালনার শীর্ষে অধিষ্ঠিত আছেন, তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, যত দিন না বাংলা ভাষার ন্যায়সঙ্গত দাবিকে প্রদেশ এবং কেন্দ্রে পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে, তত দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তথা সমগ্র ছাত্রসমাজ ক্ষান্ত হচ্ছি না।’
একটি ইশতেহার প্রকাশ করা হয় ৮ সেপ্টেম্বর, যাতে স্থানীয়ভাবে রাষ্ট্রভাষা কমিটি গঠন করতে বলা হয় এবং বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার দাবি তোলা হয়।
এরপর আসে ১৯৫২ সাল। তত দিনে খাজা নাজিমুদ্দিন আর পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নন, তিনি একেবারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তখন নূরুল আমিন। সে বছরের ২৭ জানুয়ারি ঢাকায় পল্টন ময়দানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ভাষণ দেন।
তিনি বুঝতেই পারেননি, পূর্ববঙ্গে তখন বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে প্রচণ্ড জনমত সৃষ্টি হয়ে গেছে। তাই তিনি যখন আগের কথারই পুনরাবৃত্তি করে বললেন, ‘প্রদেশের ভাষা কী হবে তা প্রদেশবাসী স্থির করবেন, কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। একাধিক রাষ্ট্রভাষা থাকলে কোনো রাষ্ট্র শক্তিশালী হতে পারে না।’ তখন ফুঁসে উঠল বাংলা।
এবার যা হলো তার জন্য পাকিস্তান সরকার প্রস্তুত ছিল না। ওই দিন থেকেই ছাত্র-জনতা ধীরে ধীরে একাত্ম হতে শুরু করেছিল। খাজা নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতার পরপরই বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতারা তখনই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ২৯ জানুয়ারি ছাত্রদের প্রতিবাদ সভা হয়। ৩০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররা প্রতীক ধর্মঘট করেন। সে দিন আমতলায় আয়োজিত সভার সভাপতি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খালেক নেওয়াজ খান। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ নেতৃবৃন্দ সভায় বক্তৃতা করেন। পরে একটি মিছিল নিয়ে নানা ধরনের স্লোগান দিতে দিতে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করা হয়। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে ছাত্র ধর্মঘট, ছাত্র সভা ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে।