ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটার পর পাকিস্তানে কেমন নির্বাচন হবে, সে ব্যাপারে রাজনীতিসচেতন সবার মধ্যেই মোটামুটি স্পষ্ট ধারণা ছিল। দেশটির বিধান অনুযায়ী, একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন হলেও তারা যে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ প্রতিষ্ঠা করতে পারছিলেন না, সেটাও ছিল স্পষ্ট।
কিছু বিতর্কিত মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে কারাগারে পাঠানোর পর তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা-কর্মীর ওপর ‘ক্র্যাকডাউন’ও হতে দেখেছে সবাই। সেটা প্রায় অব্যাহতভাবে চলেছে। নির্বাচনে তাঁদের অংশ নিতে হয় চাপের মুখে ও সুকৌশলে।
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনও তাঁদের প্রতি সুবিচার করেনি বলে অভিযোগ ওঠে জোরালোভাবে। কেননা, পিটিআই সমর্থিতদের নির্বাচনে যেতে হয় ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হিসেবে এবং দলের পরিচিত প্রতীক ছাড়া। প্রচারণা চালাতে গিয়েও পড়তে হয় বাধাবিপত্তির মুখে।
এ সময়টায় ইমরান ছিলেন কারাগারে এবং একাধিক মামলায় কারাদণ্ড হয়ে যাওয়ায় নির্বাচনেও লড়তে পারছিলেন না। এ অবস্থায় মনে করা হচ্ছিল, জনপ্রিয়তা থাকলেও এবং রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়ার পর সহানুভূতি বাড়লেও ভোটের বাক্সে তাঁর দল এর প্রতিফলন ঘটাতে পারবে না। তাই ক্ষমতায় আসবে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। তাদের জিতিয়ে আনার জন্যই এ নির্বাচন, এমনটাই মনে করা হচ্ছিল দেশ-বিদেশে।
এমন একটা ‘নীলনকশা’ থাকলেও এর বাস্তবায়ন অবশ্য দেখা গেল না পাকিস্তানের নির্বাচনে। সব প্রতিকূলতার মুখেও দেখা গেল, ইমরান-সমর্থিত প্রার্থী, নেতা-কর্মী ও ভোটাররা মাঠ ছাড়লেন না। নজিরবিহীন ঐক্য আর নাছোড় মনোভাবের পরিচয় দিলেন তাঁরা এবং বিজয় ছিনিয়ে আনলেন।
এ নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত প্রাপ্ত খবরে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সব আসনের ফল ঘোষণা না হলেও পিটিআই সমর্থিতরা এগিয়ে আছেন স্পষ্টভাবে। অফিশিয়ালি কোনো দল না হলেও ইমরান খানের নেতৃত্বে তাঁরা যে আস্থাশীল, তাতে এখন পর্যন্ত কোনো সন্দেহ নেই। ‘এখন পর্যন্ত’ কথাটি বলা ভালো; কেননা কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার গঠনে শেষতক কী হয়, তা দেখার জন্য কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে।