রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সাভারে। এরপরও চামড়াশিল্প ব্যবস্থায় বিশেষ কোনো পরিবর্তন আসেনি। ট্যানারির বর্জ্যে ধুঁকছে পরিবেশ, বিপন্ন ধলেশ্বরী নদী। দূষণ ছড়িয়ে পড়েছে আরও পাঁচ নদীতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্যানারির বর্জ্যে রয়েছে ক্রোমিয়ামসহ নানা বিষাক্ত রাসায়নিক। যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। নদীপারের বাসিন্দারা এক সময় যে নদীতে গোসল, মাছ ধরাসহ নানা প্রয়োজন মেটাতেন সেটি এখন মৃত। কুচকুচে কালো পানি-যেখানে গবাদিপশুকেও গোসল দেওয়া যায় না। ‘অকার্যকর’ কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) এই সংকট তৈরি করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে বৈশ্বিক ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে সব ধরনের পরিবেশবান্ধব সুবিধা না থাকায় পিছিয়ে পড়ছে দেশের সম্ভাবনাময় চামড়াশিল্প।
এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ট্যানারি হস্তান্তরের পরিকল্পনায় কিছু ঘাটতি ছিল। কেননা এটি যখন স্থানান্তর করা হয় তখন কঠিন বর্জ্য নিয়ে খুব একটা পরিকল্পনা করা হয়নি, যা দুঃখজনক। তিনি বলেন, শুরু থেকেই সাভার ট্যানারিশিল্প পরিবেশ দূষণ করে যাচ্ছে। কঠিন ও তরল বর্জ্য নদীতে ফেলছে। আমরা এ বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নেব, কেননা বিসিক অনেক বছর ধরে বর্জ্য পরিশোধনের অনেক অঙ্গীকার করেছে। তবে সেগুলোর কোনোটাই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, এতে আমাদের শুধু পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নয়। পরিবেশবান্ধব ট্যানারি গড়তে না পারায় আমাদের রপ্তানির ক্ষেত্রে যে লক্ষ্য ছিল তা পূরণ হচ্ছে না। পাশাপাশি বিসিক যদি পরিবেশ মানদণ্ড বাস্তবায়ন না করে তবে সেটা আইনের লঙ্ঘন। তাই আইনানুযায়ী ভবিষ্যতে আমাদের কঠিন ব্যবস্থার দিকে যেতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও ট্যানারির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণবাবদ চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৫৬৫ কোটি টাকা পরিশোধ করে বিসিক ‘অকার্যকর’ সিইটিপি বুঝে নেয়। পরে এই সিইটিপি কাগজে-কলমে সচল দেখানোর অপচেষ্টা অব্যাহত রাখে বিসিকের কর্মকর্তারা। সিইটিপি অকার্যকর থাকায় ট্যানারির ক্রোমিয়াম যুক্ত অপরিশোধিত তরল বর্জ্য সরাসরি ফেলা হচ্ছে ধলেশ্বরী নদীতে। যার কুফল ভোগ করতে হচ্ছে আশপাশের বাসিন্দাদের।