টাঙ্গাইল শাড়ির জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন (জিআই) ভারত নিয়ে নিয়েছে বলে আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। কিন্তু কেন এমন হলো? কিংবা আরেকটি প্রশ্ন করা যায়, টাঙ্গাইল শাড়ির ঘটনাই কি প্রথম? উত্তর হবে, না।
খেয়াল করলে দেখবেন, উপ্পাদা জামদানি শাড়ির জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশনের জন্য ভারত ২০০৯ সালে আবেদন করেছিল (সিপিডি ডট ওআরজি ডট বিডি, ১৯ জুন, ২০১৪)। আর বাংলাদেশ সেই আবেদন করে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে (ডেইলি স্টার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৬)। এর কারণ, আমাদের জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন এবং এ-সংক্রান্ত আইন পাস হয় ২০১৩ সালে। বাংলাদেশের পক্ষে জামদানি শাড়ি, ইলিশ মাছ, ক্ষীরশাপাতি আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, ফজলি আম, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদামাটি, রাজশাহী সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি এবং দিনাজপুরের কাটারিভোগ চালের যথেষ্ট প্রমাণ ও যুক্তি থাকায় সেগুলো মালিকানা পাওয়া সহজ হয়েছে। কিন্তু আমরা আটকে গিয়েছি টাঙ্গাইল শাড়িতে গিয়ে। এর কারণ কী? সোজা কথায়, বিষয়টি উদাসীনতার।
আজকের পত্রিকায় ৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়েছে সৌগত বসুর লেখা ‘টাঙ্গাইল শাড়ি ভারতের, কী ভাবছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি লেখা। লেখাটিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে কোনো পণ্যের জিআই স্বীকৃতি দেয় পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর। তবে এ জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে আবেদন করতে হয়। টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই নিয়ে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজ ভোরে (শনিবার) বিষয়টি জেনেছি। এর আগে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়ে তাঁদের অঞ্চলের ঐতিহ্যগত পণ্যগুলোর তালিকা চেয়েছিলাম। টাঙ্গাইলের ডিসিকেও এ নিয়ে চিঠি দিয়েছি। এখন পর্যন্ত সেখান থেকে টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে কোনো আবেদন আসেনি।’ মো. মুনিম হাসানের বক্তব্য খেয়াল করুন। তিনি দেশের সব জেলা প্রশাসক চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক খুব একটা ‘কেয়ার’ করেননি সেই চিঠির বিষয়ে।
জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। এটি পেতে সময় লাগে। যাঁরা আগারগাঁও পেটেন্ট অফিসে গিয়েছেন, তাঁরা জানেন, একটি বইয়ের কপিরাইট পেতে তিন মাসের বেশি দরকার হয়। আর জিআই একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। তাতে সময় আরও বেশি লাগে। এই পুরো সময় এ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো জানতেই পারেনি, কী হচ্ছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের হস্তশিল্প বিভাগ টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছিল (আজকের পত্রিকা, ফেব্রুয়ারি, ৪)। সেই স্বীকৃতি তারা পায় এ বছরের ২ জানুয়ারি। প্রায় ৪ বছর আমাদের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর, শিল্প মন্ত্রণালয় কিংবা তাঁত বোর্ডের মতো দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুই জানতে পারেনি! ঘটনাটি তারা জানতে পারে ১ ফেব্রুয়ারির পর কিংবা তার কিছুদিন আগে।