বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে থেমে থেমে মর্টার শেল ও গুলির শব্দে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু ও ঘুমধুমের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছেন। সীমান্তের ওপার থেকে ছোড়া গুলিতে নাইক্ষ্যংছড়ির দুজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। মর্টার শেল পড়ে এক বাংলাদেশির ঘরে আগুন ধরে গেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একটি সড়কে যানবাহন চলাচলও সীমিত করা হয়েছে। অন্যদিকে বিদ্রোহীদের সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে গত দুদিনে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) প্রায় এক শ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের নিরস্ত্র করে হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি। এর মধ্যে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় অংশ পড়েছে বান্দরবান ও কক্সবাজারে; বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে নির্মিত মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজার থেকে উখিয়া হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত যেতে মেরিন ড্রাইভের যে ৮০ কিলোমিটার সড়ক, এর খুব কাছেই মিয়ানমার। সে কারণেই কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারজুড়ে গৃহযুদ্ধ আর সংঘাতের যে উত্তেজনা, তার ছোঁয়া পড়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। এখানে সড়কের পাশের চা-দোকানগুলোয় গেলে মিয়ানমারের যুদ্ধের আলাপ কানে আসবে।
মিয়ানমারের ভবিষ্যতে কী হবে, কারা ক্ষমতা নেবে, সামরিক জান্তার কী হবে, ফের রোহিঙ্গারা আসবে কি না, সঙ্গে আরাকান কিংবা অন্য কেউ আসবে কি না—এমন নানা বিষয় নিয়ে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মানুষজন যেমন ভাবছেন, তেমনি পরিস্থিতির ওপর রাখছেন এখানকার বিদেশিরাও, যাঁরা নানাভাবে মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা রোহিঙ্গাদের কাজে যুক্ত। অবশ্য কেবল বান্দরবান, কক্সবাজার, রোহিঙ্গা ক্যাম্প কিংবা বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির খবর যাঁরা রাখেন, তাঁদের চোখও এখন মিয়ানমারের দিকে।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে মিয়ানমার। এরপর কয়েকটি নির্বাচন হলেও ১৯৬২ সাল থেকে নানাভাবে দেশটির ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে ছিল সেখানকার সামরিক জান্তারা। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়।
সামরিক জান্তা কঠোর হাতে সেই বিদ্রোহ দমন করছে এবং হাজার হাজার তরুণ এতে প্রাণ হারান। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার বদলে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম ছড়িয়ে পড়ে নানা প্রান্তে। এর মধ্যেই দেশটিতে জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) গঠিত হয়েছে, যাতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এনইউজি ঘোষণা করেছে, সামরিক জান্তাকে পরাজিত করে দেশে একটি ‘ফেডারেল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন’ গঠন করা হবে এবং সেই লক্ষ্যে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস’ সংগঠিত হয়েছে।