সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছেন, ‘আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ’। আমাদের তরুণদের বাস্তবতায় বলতে হয়, কী অসহায়ত্ব। পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন থেকে একটি দৈনিক তুলে ধরেছে, বাংলাদেশের প্রায় ৪১ শতাংশ তরুণ নিষ্ক্রিয়। তারা কাজ কিংবা শিক্ষা; কোনোটাতেই নেই। অথচ তাদের বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। দুর্বার এই বয়সটা তরুণদের এভাবেই কেটে যাচ্ছে! কাজ কিংবা শিক্ষা ছাড়া তারা অসহায়। সমাজের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় অংশ এবং দেশের বড় শক্তি তরুণদের কাজে না লাগানোর চেয়ে বড় অসহায়ত্ব আর কী হতে পারে!
বলা হয়– অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। যে তরুণটির সময় শিক্ষায় ব্যয় হচ্ছে না; যে তরুণটি কাজে ব্যস্ত থাকছে না; তার মস্তিষ্ক অকাজে ব্যয় হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাদের বিষণ্ন হওয়া, বিপথে গিয়ে কিশোর গ্যাং গঠন করা কিংবা মাদকাসক্তির মতো সামাজিক অপরাধ ও পারিবারিক সহিংসতায় যুক্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। দিন দিন যে অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে, এসব মোকাবিলায় গোড়ায় হাত দিতে হবে। তরুণদের কাজে লাগানোর বিষয়টি সামনে আনতে হবে।
প্রশ্ন হলো, তরুণরা নিষ্ক্রিয় কেন? ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সটা বলা চলে শিক্ষার। অবশ্য কারও যদি শিক্ষাজীবনে ছেদ না পড়ে, ২৪ বছরের মধ্যেই তার স্নাতকোত্তর বা উচ্চশিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কারও এর আগেও যেমন শেষ হতে পারে, তেমনি পরেও। এর অর্থ হলো, নিষ্ক্রিয় তরুণ প্রায় সবাই নানা পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়া।
প্রতিবছর আনুমানিক ৪০ লাখ শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন শুরু করে। এসএসসি পর্যন্ত তার অর্ধেক সংখ্যকই ঝরে যায়। যেমন এ বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষায় ২০ লাখ ২৪ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। যা হোক, শিক্ষা থেকে মাঝপথে ঝরে পড়াই মূলত এই ৪১ শতাংশ। এদের কাজে লাগাতে কারিগরি শিক্ষায় জোর দেওয়া দরকার।
আমাদের অসহায়ত্ব শুধু এই ৪১ শতাংশের জন্য নয়। অন্য তরুণরাই বা কতটা উৎপাদনশীল কাজে যুক্ত? এমনকি শিক্ষা অর্জনের সময় এবং এর পর চাকরি খুঁজতে গিয়েও তারুণ্যের নিদারুণ অপচয় ঘটে। পাবলিক কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তরুণদের যে বড় অংশ ভর্তি হয়, তাদের কত অংশ নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়? কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়াশোনা করছেন, তাদের কত শতাংশ একাডেমিক পড়াশোনাসহ উৎপাদনশীল কাজে যুক্ত?