ইরান ও পাকিস্তান একে অন্যের দিকে মিসাইল ছুড়েছে। খুব সম্ভবত দুই দেশই ড্রোন ব্যবহার করেছে। আর এই হামলার নিশানা ছিল সীমান্তের দুই প্রান্তের বালুচ শিবির। এই বিরোধ খুব বেশি এগোয়নি। দ্রুতই দুই দেশের মধ্যে চলা উত্তেজনার প্রশমন হয়। তারা আবার ‘ভ্রাতৃত্বের’ সম্পর্কে ফিরে যায়।
ইরানের এই হামলা চালানোর ঘটনাটি একই সঙ্গে উদ্ভট ও অযৌক্তিক। অবশ্য যে গতিতে দেশ দুটি বিরোধ মিটিয়ে নিল, তা–ও ব্যাখ্যাতীত। মাঝখান থেকে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড করপস (আইআরজিসি) ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অল্প সময়ের জন্য সবার নজরে এসেছিল। কিন্তু দুই দেশের কূটনীতিকেরা সাত তাড়াতাড়ি তাঁদের মঞ্চ থেকে হটিয়ে দিয়ে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা শুরু করেন। ফলে দুই সেনাবাহিনীও অলক্ষ্যে চলে যায়। সেনাবাহিনী অল্প সময়ের জন্য সবার নজরে এসেছিল।
ইরান কেন জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-আল-আদলকে লক্ষ্য করে হামলা চালাল, তা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি লেখা প্রয়োজন। আপাতত এটুকুই বলা যায়, জইশ-আল-আদল ইরানের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত বলে কথিত আছে। এদিকে আইআরজিসি যে ইরানের শীর্ষ সামরিক প্রতিষ্ঠান, তা প্রমাণে তাদের অনেক কিছু করতে হয়। আবার আইআরজিসি হামলা চালানোর পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও কখনো বসে থাকে না। তারাও জবাব দেয়।
পাল্টা হামলা চালানোর পক্ষে অনেক যুক্তি দেখানো হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক বক্তব্য ছিল, দেশের ভৌগোলিক সীমারেখার অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব ভয়ংকরভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। সে কারণে এই হামলার জবাব দিয়ে বোঝানো হয়েছে, পাকিস্তানে হামলার ফলাফল কী হতে পারে।
দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো এই হামলা নিয়ে যা বলছে না, তার দিকে একটু নজর দেওয়া যাক। পাকিস্তানের নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ রাজনীতির ঘুঁটি চালানোর জন্য সমালোচিত হয়ে আসছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে তারা দেখাল, বহিঃশক্তি হামলার মুখে তাদের সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা কতটুকু।
পুরো ঘটনায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ও কম তাৎপর্যপূর্ণ নয়। বিশেষ করে একটি রাজনৈতিক দলের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কর্তৃপক্ষের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিল। সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে ক্রমাগত টিপ্পনী কেটে যাচ্ছিল তারা। ফলে পাল্টা হামলা চালিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কিছু কৃতিত্বের দাবি করতেই পারে।
পাকিস্তানের এ অবস্থানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন কিছু টিভি ব্যক্তিত্ব। কারণ, তাঁদের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর ব্যাপক দহরম–মহরম আছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যদি পাল্টা মিসাইল না ছোড়ার সিদ্ধান্ত নিত, তাহলে তাদের কথার সুরও পাল্টে যেত। সে যাক, মোটের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কিছু কৃতিত্ব দেখাতে পেরেছে। এমনকি তাদের কঠোর সমালোচকেরাও এই দফায় তাদের প্রশংসা করেছে। সেনাবাহিনীর জনপ্রিয়তার সূচকে এভাবে তারা কিছু নম্বর যোগ করতে পেরেছে।
আমার মতো সাংবাদিকদের জন্য পাকিস্তান একটি জটিল ‘কেস’। কেন জটিল, তার কিছু প্রমাণ পাবেন কিছু মিডিয়া ব্যক্তিত্বের কথায়। মিসাইল হামলার দরুন নির্বাচন পথভ্রষ্ট হবে, এমন ভাবনা থেকে তাঁদের কাউকে কাউকে উল্লাস করতে দেখা গেছে। তাঁদের যুক্তি ছিল, জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির সমাধান আগে করতে হবে। এর আগে পর্যন্ত অন্য যেকোনো জাতীয় অগ্রাধিকারকে সরিয়ে রাখা উচিত। তারা আসলে কাদের পক্ষে কথা বলছে? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে?