উৎপাদনের ভরা মৌসুমেও ১০ টাকা কেজির আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। এতে অসুবিধায় পড়েছে অল্প আয়ের মানুষ। বেশি দিনের কথা নয়; গত বছর এ সময়ে নতুন আলু প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা আর পুরনো আলু ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। কম দাম, সহজ রন্ধন পদ্ধতি ও সুস্বাদের জন্য সবজি হিসেবে বাংলাদেশে বেশি আলু ব্যবহৃত হয়। আলু ভর্তা ও ডিম হলো গরিব মানুষের প্রিয় খাদ্য। গার্মেন্টস শ্রমিক, হোস্টেলের ছাত্রদের কাছেও আলু ভর্তা একটি আকর্ষণীয় খাবার। আলু থেকে চিপস, ফ্রেন্স ফ্রাই, প্রভৃতি মুখরোচক খাবারও তৈরি করা হয়।
পুষ্টিগুণের বিচারে আলু ভাতের চেয়েও অধিক পুষ্টিকর। পৃথিবীতে মানুষের প্রধান খাদ্য হিসেবে ভুট্টা, গম ও চালের পরই আলুর অবস্থান। বিশ্বের অনেক দেশেই প্রধান খাদ্য হিসেবে আলু খাওয়ার প্রচলন আছে। তবে আমাদের দেশে আলু এখনো সহায়ক খাবার। আলু নানা ধরনের ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা মেটায়। অন্যদিকে খাদ্য আঁশ থাকায় আলু হজমে সহায়ক এবং রক্তে শর্করার হার ঠিক রাখে। ভিটামিন-সি থাকায় আলু শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
বহু বছর ধরেই আলুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে কৃষিপণ্যটির মাথাপিছু ভোগ। ব্যবহার বেড়েছে খাদ্য ও ফিড শিল্পেও। তবে পণ্যটির চাহিদা যে গতিতে বেড়েছে, উৎপাদন বা সরবরাহ সে গতিতে বাড়েনি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালের পর থেকেই দেশে উদ্বৃত্ত আলুর পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আলুতে নিট উদ্বৃত্ত অচিরেই নিট ঘাটতিতে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় উৎপাদনশীলতা বাড়ানোয় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। অন্যথায় আলুতেও বাংলাদেশের আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিএআরসির গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছরই আলুর নিট চাহিদা ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও কমে আসছে নিট উদ্বৃত্তের পরিমাণ। ২০১৭ সালেও দেশে আলুর নিট চাহিদা ছিল ৬২ লাখ ৭১ হাজার টন। ২০২০ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮ লাখ ১৭ হাজার টনে। অন্যদিকে ২০১৭ সালে দেশে আলুর উদ্বৃত্ত ছিল ১৩ লাখ ৮৫ হাজার টন। ২০২০ সালের মধ্যে তা নেমে আসে ৩ লাখ ৪০ হাজার টনে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করে বিএআরসি। ২০২০ সালে আলু, পেঁয়াজ ও চালের বাজার অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে গবেষণাটি করা হয়। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই সময়ের তুলনায় দেশে আলুর চাহিদা এখন আরও অনেক বেশি। আবার উদ্বৃত্তের পরিমাণও অনেকটাই কমে যাওয়ার পথে। এ কারণেই ২০২৩ সালে আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সদ্যবিদায়ী বছরে দেশে সবচেয়ে বেশি মূল্য অস্থিতিশীল পণ্যগুলোর অন্যতম ছিল আলু। নানা পদক্ষেপেও বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসায় একপর্যায়ে আলু আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। এরপরও বাজারে পণ্যটির দাম এখনো গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেশি।