নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে আমাদের আশার কারণগুলো কী কী? দেশের রাজনীতি সঠিক পথে চলছে— এমন বলাটা মুশকিল। পথের কাঁটা হয়ে আছে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী রাজনীতি। মূলত পাকিস্তান ভাঙার আক্রোশ আর দ্বিজাতিত্ত্বের কারণে এই রাজনীতির পালে হাওয়া লেগেছিল। মজার বিষয় বয়স্কদের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত। এদের কথায় দেশ চলে না। চলবেও না। ইতিহাস বলছে এরা সুযোগ পেয়েছিল। দখল করে, আধিপত্য বিস্তার করে সামরিক-বেসামরিক ছত্রচ্ছায়ায় এরা ক্ষমতার দাপট দেখাতে কসুর করেনি। কিন্তু দিনশেষে তারা টেকেনি। কারণ রক্তমাখা ইতিহাস আর দেশ তাদের ভোলেনি। ভোলেনি তার আত্মত্যাগী সন্তানদের কথা।
শেখ হাসিনার হাতেই রয়ে গেছে দেশের কর্তৃত্ব। তিনি যেসব পরিবেশ-পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন বা করেছেন তাঁর দিকে তাকালেও অনেক সরকারপ্রধানের হাত-পা কাঁপবে। কিন্তু সবকিছু সামাল দিয়ে আজ টানা চতুর্থ মেয়াদে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। এটা মানতেই হবে সবার কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। জনবহুল দুর্নীতিগ্রস্ত একটি সমাজ ও দেশের সরকারপ্রধানের কাজ সহজ নয়। তারপরও গুজবের ডালপালা সরিয়ে শেখ হাসিনা এগিয়ে চলেছেন। তাঁর কথা স্পষ্ট ও সরাসরি। মাঝে মাঝে তা আমাদের হতবাক করলেও পরে ঠিকই টের পাওয়া যায় কী কারণে এবং কেন তিনি তা বলেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে যে আওয়ামী লীগ তার আপন মহিমায় উদ্ভাসিত তার ভিত্তি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী ইতিহাসে দলটি এগিয়েছে নানা আলোচনা ও সমালোচনার ভেতর দিয়ে। একসময় এমনও দেখেছি আওয়ামী লীগের মানুষজনই বাকশাল করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট করেছে। সেসব ঘটনার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের উদ্দেশ্য ছিল দলটিকে নির্মূল করে ফেলা। সে আশা পূর্ণ হয়নি। আজ আওয়ামী লীগই ইতিহাসে সবচেয়েবেশি সময় দেশ শাসনের গৌরবে গৌরবান্বিত এক দল।
বর্তমান মন্ত্রিসভার কাজ শুরু হলে এবং সময় গেলে তার মূল্যায়ন করা যাবে। কিন্তু এটা বলতেই হয়, এবারের মন্ত্রিসভায় বেশ কিছু মুখ আর তাদের পদবি আমাদের উৎসাহিত করে তুলেছে। শুরুতেই বলব চট্টগ্রামের কৃতিসন্তান নওফেলের কথা। প্রয়াত মেয়র জননেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর সুযোগ্য পুত্রটি এবার শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন। এর আগেও একই মন্ত্রণালয়ে ছিলেন, কিন্তু পূর্ণ মন্ত্রীত্ব ছিল না। তার এই পদায়ন আমার মতে সেরা সিদ্বান্ত। কথা শুনলেই আপনি বুঝবেন তিনি কতটা শিক্ষিত আর চমৎকার জ্ঞানসম্পন্ন। দীর্ঘসময় বিদেশে পড়াশোনা করা এবং ব্যক্তিজীবনে আধুনিক এই যুবকের হাতে আমাদের শিক্ষা যে তার সীমাবদ্ধতা দূর করেতে পারবে এটা ভাবাই যায়। যিনি পদে আসীন হবার পরই বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মানে জমি অধিগ্রহণ, বিল্ডিং নির্মাণ বা শিক্ষক নিয়োগ নয়। মূল বিষয় লেখাপড়ার মান। কথাতেই এমন বহুমাত্রিক, গতিময়, প্রাণবন্তা তরুণকে এই পদে নিয়ে আসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।