দেশের প্রায় ৭৫ ভাগ মানুষ নানা কাজে পলিথিন ব্যবহার করে থাকে। এই ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা শুধু শপিংয়ে নয়, প্রাত্যহিক কাজে এর ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রধান কাজটি হচ্ছে খাদ্যদ্রব্য পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে ফ্রিজে রাখা। অথচ আমাদের অনেকেরই জানা নেই, পলিথিন মুড়িয়ে খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করলে একধরনের অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার কবলে পড়ে তা। পরে সেই খাদ্যদ্রব্য বের করে আনলে ‘স্টাইরিন’ নামের গ্যাস উৎপাদিত হয়ে নিশ্বাস ও লোমকূপের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। ফলে মাথাব্যথা, দুর্বলতা, জটিল ও কঠিন রোগব্যাধির সৃষ্টি হয়; এমনকি স্নায়ুতন্ত্র বিকলের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
অন্যদিকে প্লাস্টিকের পানির বোতল ও ট্যাপ ব্যবহারের প্রবণতার কারণে মানুষের প্রজননক্ষমতা হ্রাস, অ্যালার্জি, হাঁপানি, চর্মরোগ, থাইরয়েডের অতিরিক্ত হরমোন ধারণ এবং ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ দেখা দেয়। অনেকে আবার খাবারকে নিরাপদে ঢেকে রাখতে রঙিন পলিথিন ব্যবহার করেন, যা আরও মারাত্মক। পলিথিনের রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে রঙের রাসায়নিক উপাদান মিশে খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টির কারণে পরে জটিল রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতে হয়।
পলিথিন ব্যবহারে শুধু খাদ্যে বিষক্রিয়াই ঘটে না, ঘটে ড্রেনেজব্যবস্থারও বিপত্তি। কারণ পলিথিন শত শত বছর ধরে সক্রিয় থাকতে সক্ষম। এটি মাটির নিচে অথবা পানিতে দ্রবীভূত হয় না। পলিথিন উৎপাদনে যে পলিমার ব্যবহার করা হয়, তা খুবই শক্তিশালী এবং যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া এর ভেতরে প্রবেশ করে নষ্ট করতে পারে না বলেই শত বছরেও অক্ষয় থেকে যায়।
এ কারণে মাটির উর্বরাশক্তি হ্রাস পায় এবং স্যুয়ারেজ বা ড্রেনে আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। এ ধরনের জলাবদ্ধতায় ড্রেনেজব্যবস্থা তো ভেঙে পড়েই, তার ওপর ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গু মশার উপদ্রবও বাড়ে। এ ছাড়া পলিথিনের মিশ্রণের কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, নদ-নদী এবং সমুদ্রে পলিথিনের বর্জ্য নিক্ষেপণের ফলে জলজ প্রাণীদের জীবনহানি ঘটছে ব্যাপকভাবে। খাদ্য ভেবে জলজ প্রাণীরা পলিথিনের বর্জ্য খেয়ে হজম করতে না পেরে পরিশেষে প্রাণ হারায়। এভাবে অনেক তিমি, কাছিমসহ অসংখ্য জলজ প্রাণী প্রাণ হারিয়েছে। সত্য কথাটি হচ্ছে, সমুদ্রে পলিথিনের বর্জ্যের ভাগাড় বানানোর জন্য বাংলাদেশ মোটেও দায়ী নয়।
মূলত বঙ্গোপসাগরে বিদেশি জাহাজ কর্তৃক বর্জ্য নিক্ষেপের কারণে সমুদ্র বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। এর আগে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় বেশ কিছু জাহাজ গোপনে বর্জ্য খালাস করেছে, সেই সংবাদও গণমাধ্যমে এসেছে। ১৯৯৮ সালের আলোচিত বিষয় ছিল, পারমাণবিক বর্জ্যভর্তি বিদেশি একটি জাহাজ সাগর-মহাসাগরে বর্জ্য নিক্ষেপ করতে ব্যর্থ হয়ে বঙ্গোপসাগরে গোপনে নিক্ষেপ করে চলে যায়। এভাবে আন্তর্জাতিক চক্র প্রতিনিয়তই পলিথিনের বর্জ্য সাগরে নিক্ষেপ করে যাচ্ছে।