হারতে বসেও জিতে গেছেন ১৪ দলীয় জোটপ্রার্থী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। নৌকায় চড়ে ভোটে এগিয়েছেন লঞ্চের গতিতে। ১ লাখ ২২ হাজার ১৭৫ ভোটে জিতেছেন। তাও বাংলার বাঘ শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের নাতি ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী একে ফাইয়াজুল হককে হারিয়ে। এবারের ভোটের বাজারে এটি যেনতেন ব্যাপার নয়। যেখানে মেননের সহকর্মী জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর লঞ্চ গেছে, পঞ্চও গেছে। করুণ দশা হয়েছে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে। নৌকার প্রার্থী হয়েও ট্রাকডলা খেয়েছেন। ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র কামরুল আরেফিন জিতেছেন এক লাখ ১৫ হাজার ৭৯৯ ভোট পেয়ে। কেবলই নৌকার গুইে টানা গত তিনবারের এমপি ইনু হেরে গেছেন ২৩ হাজার ৩৫৪ ভোটের ব্যবধানে।
ইনু-মেননসহ চৌদ্দদলীয় তথা জোট মিত্রদের অনেকের খুব আশা ছিল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাদের জিতিয়ে আনার গ্যারান্টার হবেন। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যেই বলেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসতে হবে। টানা ১৫ বছর সরকার এবং ক্ষমতার সঙ্গে থেকেও কেন তারা নির্বাচনে জেতার মুরোদ অর্জন করতে পারেননি, সেজন্য ভর্ৎসনাও করেছেন। তারা সামনাসামনি দাঁত কেলিয়ে হেসেছেন। ঘাড়-মাথা চুলকিয়েছেন। ভেতরে ভেতরে মাইন্ড করেছেন। ভয়ও পেয়েছেন। এক পর্যায়ে তাদের নৌকায় চড়িয়ে দিয়েছেন, যেন অন্তত মার্কার জোরে পাস করতে পারেন। সেই সামর্থ্যও হয়নি তাদের। নিজে ডুবেছেন। আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকাকেও ডুবিয়েছেন।
এর আগে তাদের কয়েকজনকে তথ্য, বিমান, শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীও করা হয়েছে। কয়েকজনকে স্থায়ী কমিটিতে দেওয়া হয়েছে। মেনন-ইনুর স্ত্রীদের সংসদের সংরক্ষিত আসনে এমপি পর্যন্ত করা হয়েছে। বাম শীর্ষ দুই নেতাকে হজ পর্যন্ত করিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু, চেয়ার পাওয়ার পর এক এক জনের ভিন্ন চেহারা দেখা গেছে। সাম্য-গণতন্ত্র মেহনতি মানুষের দরদ বা বাম চর্চার বদলে কারও কারও বিরুদ্ধে ক্যাসিনো থেকে শুরু করে ওয়াইফাই-কলসেন্টার, ডিশ, ভিসা কারবারসহ নানা আজেবাজে কাজের অভিযোগ শুনতে হয়েছে। এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণসহ মোটা ফাইলও গেছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এসবের জেরে গেল দফায় আর তাদের মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়নি। তবে, ছায়া দিয়ে রাখা হয়েছে। আবার অবিরাম সতর্কও করা হয়েছে। বার বার সতর্ক করায় তারা গোস্যা করেছেন। মাঝেমধ্যে টুকটাক হুমকিও ছেড়েছেন। তারা না থাকলে আওয়ামী লীগকে রাস্তায় ফ্যা ফ্যা করে ঘুরতে হবে এমন সতর্কতা প্রকাশ্যে দিয়েছেন হাসানুল হক ইনু। তাদের খুচরা ভাবার সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, তাদের নিয়েই আনায় আনায় মিলিয়েই ষোলো আনা হয়েছে সরকারের। নির্বাচনের ক’দিন আগেও সমঝোতা নিয়ে অসন্তুষ্টির মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়েছেন তিনি। থ্রেট করেই বলেছেন, ‘বিপদে ঐক্য, বিপদ কেটে গেছে মনে করে আত্মপ্রসাদে ভুগে ঐক্যকে অবহেলা করা আত্মঘাতী।’