বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তর ইতিহাসে নজর দিলে আমরা বিভিন্ন খাতে বেশ অর্জন এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা দেখতে পাই। জীবনযাত্রার মান, গড় আয়ুষ্কাল, মাথাপিছু আয়, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ আর্থসামাজিক যে সূচকগুলো রয়েছে সব ক্ষেত্রেই আমাদের উন্নতি হয়েছে বলে মনে করি। পরবর্তী প্রজন্ম আগের প্রজন্ম থেকে ভালো থেকেছে। তার ধারাবাহিকতায় আমি আশা করি, ২০২৪ সালে আমরা পেছনের সেই অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যাব। পাশাপাশি এ কথা স্বীকার করতে হবে, আমরা ২০২৪-এ প্রবেশ করছি এমন একটি বছর থেকে যে বছরে আমরা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। আর্থসামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমনি আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি তেমনি সামষ্টিক অর্থনীতি পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রেও আমরা সমান ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছি। সুতরাং এসব ঝুঁকির বিষয় আমলে নিয়ে আমাদের নতুন বছরে পা রাখতে হবে। এসব ঝুঁকি যে শুধু আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ঘটনার জন্য সৃষ্টি হয়েছে তা নয়, এখানে আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনারও ভূমিকা রয়েছে। যেমন আমাদের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভঙ্গুর ব্যবস্থাপনাও এসব ঝুঁকি সৃষ্টির জন্য দায়ী। ২০২৪ সালের দিকে তাকিয়ে সেই দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার প্রত্যাশা করি। আবার আমাদের যে অর্জন হয়েছে তার শক্তিমত্তার ওপর দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকানোর চেষ্টা করতে হবে। এ দুই ধরনের প্রত্যাশা নিয়েই আমি নতুন বছরকে দেখছি।
২০২৩ সাল জুড়েই উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ভুগেছে সর্বস্তরের মানুষ। বিশেষ করে যারা স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের ক্রয়ক্ষমতার অবনমন হয়েছে। এছাড়া নিম্ন মধ্যবিত্তদের ওপরও মূল্যস্ফীতির একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি, এ বছর আমাদের প্রথম কাজ হিসেবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে শ্রমবাজারে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। নতুন বছরে বিনিয়োগ চাঙ্গা না হলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে জড়িত যেসব বিষয় রয়েছে সেসব দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে।
পাশাপাশি সুদহার নীতিতেও পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সুদহার নীতি প্রণয়ন করতে হবে। অন্যদিকে সঞ্চয়কারীদেরও বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি। এক্ষেত্রে বাজারের সঙ্গে যদি সমন্বয় করে আমাদের সুদহার নীতি গ্রহণ করা হয় তাহলে সঞ্চয়কারীর সংখ্যা বাড়বে। এছাড়া আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার যে বিনিময় হার রয়েছে সেটাকে বাজারের সঙ্গে সমন্বয়ের হার অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালু রাখতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে বাজারে মুনাফালোভীদের একচেটিয়া যে আধিপত্য বিগত সালগুলোয় আমরা লক্ষ করেছি সেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নজরদারি বাড়াতে হবে।
২০২৪ সালে আমাদের পদক্ষেপের ফলাফল নির্ভর করবে আমরা বাড়তি যেসব পদক্ষেপ নেব তার ওপর। এক্ষেত্রে আমরা যদি আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার সঙ্গে কাজগুলো করতে পারি তাহলে আমাদের এ বছরটা গত বছরের তুলনায় ভালো ফলাফল নিয়ে আসবে বলে আমার ধারণা। অন্যদিকে আমরা যদি শুধু গড়পড়তা পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করি তাহলে আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে তা ভালো হবে বলে আমি মনে করি না।