লোককবি গুরুদাস পালের একটি জনপ্রিয় গান আছে, ‘ও মরি, স্বভাব তো কখনো যাবে না’। আসলেই মানুষের স্বভাব পাল্টানো খুব মুশকিল। কিছু কিছু স্বভাব, সেটা ভালো বা খারাপ হোক, মানুষের মাঝে গড়ে ওঠে পরিবার থেকে, পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে, সমাজের ভেতর থেকে। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব; এই সমাজ থেকে অনেক কিছু গ্রহণ করে। নিজের জীবনের সঙ্গে সেই স্বভাব ‘অ্যাডজাস্ট’ করে নেয়।
ইউরোপের কোনো দেশে আপনি দেখতে পাবেন না উল্টো পথে যানবাহন চলে। কোথাও দেখতে পাবেন না লাল বাতি জ্বলার পরেও ওই পথ দিয়ে কোনো পথচারী বা যানবাহন চলাচল করে। তাদের পারিপার্শ্বিক ও সমাজের শিক্ষাই হলো নিয়ম মেনে চলা। এসবের ব্যতিক্রম হলেই পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক ব্যবস্থা আইন লঙ্ঘনকারীকে ধিক্কার দেবে, আইন লঙ্ঘনকারী সটকে পড়বে সবার কাছ থেকে, সমাজের মূল স্রোত থেকে।
একদিন পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাঁর একটি অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন। তিনি একদিন ডেনমার্কের এক রাস্তায় লক্ষ করেছেন, লাল বাতি জ্বলে উঠলে একটি কুকুর দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। সবুজ বাতি জ্বলা পর্যন্ত সে নাকি দাঁড়িয়েই ছিল। আমাদের দেশে দেখবেন এর উল্টো জিনিসটা চলছে। আমরা আইন ভঙ্গ করলে সেটাকেই বাহাদুরি মনে করি। প্রতিনিয়ত রাস্তায় বের হলে দেখবেন কোন রঙের বাতি জ্বলছে, ট্রাফিক সিগন্যাল কোন দিকে যান চলাচলের নির্দেশ দিচ্ছে, সেদিকে কারও খেয়াল নেই—মোবাইল ফোন টিপতে টিপতে নির্বিকারে হেঁটেই চলছে। কেউ কিছু বলছে না, সবাই আমরা নির্বিকার। এত গণতন্ত্র আমাদের দেশে যে এমন অন্যায় কাজকেও আমরা গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা মনে করি!