২০১৪ ও ’১৮ সালের চেয়ে ‘ভিন্নধর্মী নির্বাচন’ করার চেষ্টায় ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূলে বিভক্তি ও সংঘাতের সুযোগ সৃষ্টি হলো কিনা– এ প্রশ্ন উঠতে পারে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে প্রচার শুরু হতে না হতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের খবর। প্রতিপক্ষের ওপর বোমা হামলা ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের খবরও রয়েছে। ইতোমধ্যে একজনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে পিরোজপুরে, যেখানে একজন মন্ত্রী দলীয় মনোনয়ন নিয়ে লড়ছেন। ক্ষমতাবান মন্ত্রীদের বিরুদ্ধেও স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। এতে তৃণমূলে ক্ষমতাসীন দলে এসেছে বিভক্তি। আমাদের রাজনীতিতে গোষ্ঠী ও পরিবার এক বড় বিষয়। বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে ‘নিজেদের মধ্যকার’ নির্বাচন ঘিরে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেখানেও এসেছে বিভক্তি। হালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমন ঘটতে দেখা যাচ্ছিল। এখন জাতীয় নির্বাচনেও এসব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই এবার স্পষ্ট করা হয়েছিল– মনোনয়নপ্রাপ্তদের পাশাপাশি দলের নেতারা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। ‘ডামি প্রার্থী’ রাখার কথাও বলা হয়, যাতে কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে না পারেন ২০১৪ সালের মতো। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিনক্ষণ পেরিয়ে যাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, সিংহভাগ আসনেই আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। বেশ কিছু আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী একাধিক। ১২৫টির বেশি আসনে দলের মনোনয়নপ্রাপ্তরা নাকি মোকাবিলা করবেন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। তাদের একাংশ বর্তমান সংসদের সদস্য, যারা মনোনয়ন পাননি। আবার অনেকে স্থানীয় সরকারের পদ ছেড়ে এমপি হওয়ার চেষ্টায় স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। জোটসঙ্গী ও মিত্র দলকে যে ৩২ আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানেও সিংহভাগ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্রদের মোকাবিলা করতে হবে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীর সিংহভাগ স্বভাবতই দল থেকে উঠে আসা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ‘নিজেদের মধ্যকার’ নির্বাচনে এ নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা।
এগুলো হিসাবের বাইরে ছিল না। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা নিয়ে মিডিয়ায়ও বলাবলি হচ্ছিল। দলের ভেতর থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার নজিরবিহীন সুযোগ দেওয়া না হলে শুধু ছেড়ে দেওয়া ৩২ আসনে হয়তো সীমিতভাবে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতো। নানা পরিস্থিতি সামলে আসা সরকারের পক্ষে সে ‘ব্যবস্থাপনা’ কঠিন হতো না। মাঠে উপস্থিত স্বতন্ত্র, বিশেষত শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি সামলানো এখন সত্যিই কঠিন। ইতোমধ্যে বেশ কিছু আসনে আওয়ামী লীগের বড় অংশ অবস্থান নিয়েছে কোনো না কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে। সামনে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে অন্যান্য আসনেও। তবে অর্ধেকের বেশি সংখ্যক আসনকে সম্ভবত ‘নিরাপদ’ রাখা হয়েছে, যাতে ক্ষমতাসীন দল মনোনীতদের সুনিশ্চিত জয় নিয়ে সরকার গঠনে কোনো বাধা না থাকে। স্বতন্ত্ররা জিতে এলে তারাও ক্ষমতাসীন দলেরই লোক। অনেক ক্ষেত্রে দাবি করে বলা হচ্ছে, তারাই ‘জেনুইন আওয়ামী লীগ’!