একজন রোগীর অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয় বিশেষজ্ঞ শল্য চিকিৎসকের (সার্জন) তত্ত্বাবধানে। আর শরীরের প্রয়োজনীয় অংশকে অসাড়-অজ্ঞান করার (অ্যানেস্থেসিয়া) মাধ্যমে রোগীকে অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুতের কাজটি করে থাকেন অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট। এর পাশাপাশি অসাড় অবস্থায় হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর কার্যকারিতা ঠিক রাখা এবং অস্ত্রোপচার-পরবর্তী সময়ে রোগীর জ্ঞান ফেরানো ও ব্যথা প্রশমনের কাজটিও করেন তিনি। জটিল অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি সার্জন ও অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট—দুজনের ওপরই নির্ভর করে। এজন্য গোটা বিশ্বেই স্বাস্থ্য খাতে সার্জন ও অ্যানেস্থেসিওলজিস্টের পর্যাপ্ততার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়।
যদিও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত চলছে সার্জন ও অ্যানেস্থেসিওলজিস্টের মতো বিশেষায়িত চিকিৎসকের সংকট নিয়ে। বিশেষ করে দেশের সরকারি স্বাস্থ্য খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোয় এ সংকট তুলনামূলক বেশি প্রকট। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি হাসপাতালগুলোয় গড়ে সার্জন রয়েছেন একজন। আর গড়ে প্রতি দুটি হাসপাতালের বিপরীতে অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট রয়েছেন একজনেরও কম। আবার এসব হাসপাতালে গড়ে প্রতি তিনজন সার্জনের বিপরীতে অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট আছেন মাত্র একজন। রয়েছে ল্যাব টেকনিশিয়ানের মতো জনবলের সংকটও। ‘বাংলাদেশ হেলথ ওয়ার্কফোর্স স্ট্র্যাটেজি ২০২৩’ শীর্ষক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কৌশলপত্রের তথ্য অনুযায়ী, অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট ও ল্যাব টেকনিশিয়ানের অভাবে কোনো কোনো সরকারি হাসপাতালে সার্জারি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে।
শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে অ্যানেস্থেসিওলজিস্টের মতো বিশেষায়িত চিকিৎসকের সংকট আরো বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট আছেন দুই হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে সরকারিতে রয়েছেন প্রায় এক হাজার। প্রাথমিক স্বাস্থ্য কাঠামোর মধ্যে ৪২৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট রয়েছেন ১৪২ জন। এ পর্যায়ের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে অনুমোদিত অ্যানেস্থেসিওলজিস্টের পদ খালি ৭০ শতাংশ।