একাত্তরে ফজলে হাসান আবেদ ছিলেন ৩৫ বছরের টগবগে এক তরুণ। শেল অয়েল কোম্পানির হেড অব ফাইন্যান্স হিসেবে কাজ করছেন চট্টগ্রামে। এপ্রিলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি লন্ডনে চলে যান। সেখানে বন্ধু ও সহকর্মীদের সাহায্যে ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ ও ‘হেল্প বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
অ্যাকশন বাংলাদেশ একাত্তরে চলমান গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তুলে ধরে। অন্যদিকে হেল্প বাংলাদেশের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হয়। এ কাজে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দেন ফজলে হাসান আবেদ।
২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর পর অন্য অঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কয়েক দিনের মধ্যেই পুরো চট্টগ্রাম পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে চলে যায়। এপ্রিলের দিকে সংযোগ পুনঃস্থাপিত চালু হলে তিনি ঢাকায় আসেন। উল্লেখ্য, সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ের পর মনপুরায় ত্রাণ কর্মসূচি পরিচালনার জন্য আবেদ ও তাঁর বন্ধুরা মিলে ‘হেল্প’ নামের যে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেটির প্রধান কার্যালয় ছিল ঢাকায়।
এ সময় শেল কোম্পানির তৎকালীন চেয়ারম্যান জেনারেল আবদুর রহিম ঢাকায় আবেদের অবস্থানের কথা জানতে পেরে তৎকালীন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে একটি মিটিং ডাকেন। সেখানে তিনি বলেন, চলমান যুদ্ধে শেল পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ করবে। টিক্কা খানের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তেল কোম্পানিগুলো থেকে একজন লিয়াজোঁ অফিসার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যিনি সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে লিয়াজোঁ রক্ষা করবেন। আবেদই হবেন সেই লিয়াজোঁ অফিসার। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিপদ হতে পারে উপলব্ধি করে তিনি বিষয়টি মেনে নেন এবং পরের কয়েক দিন নিবিষ্ট মনে কাজ করেন।
এপ্রিলের শেষ দিকে জানতে পারেন পাকিস্তানের প্রতি আমেরিকার সমর্থন বন্ধ করার জন্য আমেরিকায় তাঁর বন্ধুরা তদবির করছেন। ইতিমধ্যে তাঁর ঘনিষ্ঠ অনেকেই ভারত অথবা অন্য কোনো দেশে চলে গেছেন। তিনি ভাবেন, তহবিল সংগ্রহ কিংবা জনমত গঠন—যা–ই হোক লন্ডনে গেলে তিনি ভালোভাবে দেশের জন্য কাজ করতে পারবেন। তখন তিনি লন্ডনে যাওয়ার জন্য মনস্থির করেন। কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে লন্ডনে যাওয়া ছিল দুঃসাহসিক কাজ।
উল্লেখ্য, লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে নিয়োগের পর তাঁকে একটি বাঘ মার্কা পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। এই ‘ফ্রি মুভমেন্ট পাস’-এর মাধ্যমে কারফিউ জারি থাকলেও তিনি নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারতেন। ঢাকা-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় তখন তিনি প্রথমে করাচিতে যান। সেখানে শেলের এক সহকর্মীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। তিনি কোম্পানির চেয়ারম্যানকে আবেদের ঢাকা ত্যাগের বিষয়টি জানিয়ে দেন।