শাসকেরা জমিদার ও তাঁদের লাঠিয়ালদের নাকি সাতটি পর্যন্ত খুনের আগাম অনুমতি দিয়ে রাখত। এসব খুনের জন্য তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হতো না। দাঁড়াতে হতো না আদালতের কাঠগড়ায়। তবে খুনের এই চর্চা ব্রিটিশ আসার আগেও এ দেশে ছিল।
আসলে কর্তৃত্বকে মজবুত করার জন্য রাজা–বাদশাদের আমলেও তাঁদের তাঁবেদার বা অনুগত চাকরবাকরদের পদমর্যাদা অনুযায়ী খুনখারাবি বা গুম–হত্যার লাইসেন্স দিয়ে রাখা হতো। তবে কে কয়টা গুম–খুন করতে পারবে, কাগজে–কলমে তার একটা সীমারেখা ছিল। এসবের চর্চা থেকেই বুঝি ‘সাত খুন মাফ’ কথাটা চালু হয়ে যায়।
বলা বাহুল্য, সাত সাতেই থেমে থাকে না। সাতের লাইসেন্স নিয়ে সাত শ বা সাত হাজার মানুষকে হাপিশ করে হত্যাকারীরা পার পেয়ে যেত। লাইসেন্স প্রদানকারীরা যত দিন তখতে তাউসে আসিন থাকতেন, তত দিন জল্লাদরা নির্বিঘ্নে খুন–গুম চালিয়ে যেত। তবে গদি ওলটালে খবর হতো কখনো–সখনো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তত দিনে বিচার চাওয়ার লোক থাকত না।
বিচার চাওয়ার লোক থাকলে কাজ হয়
একদিন না একদিন বিচার হবেই—এমন আশায় অনেকেই বুক বাঁধেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে রাষ্ট্রের মনের ও মানের রং বদলালে নথিতে চাপা পড়ে থাকা খুনের শুনানি শুরু হয়। আবার কখনো প্রায় অসম্ভব সৎ এবং পেশাদার কর্মকর্তার অবিরাম প্রচেষ্টায় মামলার জট খোলে। মামলার চাকা ঘোরে, নথিপত্র খুঁজে পাওয়া যায়। মোকদ্দমা তার প্রাণ ফিরে পায় ৩০ বছর পরও।
আমাদের প্রিয় সহপাঠী রেলের সাবেক চিকিৎসক ডা. গাউসের বোন সগিরা মোর্শেদ হত্যার বিচার আবার শুরু হয়েছে। খুনিরা ধরা পড়েছে। বিচার চলবে। আজ থেকে প্রায় ৩৪ বছর আগে ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই রমনা এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী সগিরা মোর্শেদ খুন হন।