প্রথমে ঘরছাড়া, এর পর দেশছাড়া

সমকাল শারমিন মুরশিদ প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:১২

নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা মানুষটির রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। বহু মানুষের সান্নিধ্য তাঁকে করেছে ঋদ্ধ। সেসব অভিজ্ঞতা তিনি কথোপকথনে  তুলে ধরেছেন।


একাত্তরের ২৫ মার্চ আপনারা কোথায় ছিলেন?


শারমিন মুরশিদ: ২৫ মার্চ রাতে যখন অপারেশন সার্চলাইট শুরু হলো, তখন ছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। চারপাশে চলছিল বীভৎস যুদ্ধযজ্ঞ। সারারাত ছিলাম বিছানার নিচে। জানালায় উঁকি দিতেও পারছিলাম না– তারা গুলি করতে পারে! দেখলাম, কী করে তারা জিপে রক্তাক্ত শার্ট পতাকার মতো উড়িয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাইকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে– কেউ যেন ঘর থেকে বের না হয়। আমার মনে আছে, জানালায় উঁকি দিয়ে দেখছি, আমাদের পেছনের একটি বাড়িতে পাকিস্তানি সেনারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াল; নিমেষে গুলির আওয়াজ। পরে জানতে পারলাম, তারা কিছু বাড়িতে মানুষ মেরেছে। মা-বাবা ধরেই নিয়েছিলেন, ক্র্যাকডাউন যখন হলো, সেনাবাহিনী যখন নেমে গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে গেছে, তখন যে কোনো মুহূর্তে তারা আমাদের বাসায় প্রবেশ করবে। আমরা রীতিমতো অপেক্ষমাণ। কিন্তু তারা আসেনি। ২৬ গেল। ২৭ মার্চ যখন কিছুক্ষণের জন্য কারফিউ ভাঙল, বাবা বাসা থেকে বের হয়ে ছুটে গেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেসব মানুষ, যাদের সঙ্গে বছরের পর বছর একসঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের এভাবে মেরে ফেলা হবে, তা কীভাবে তিনি মেনে নিতে পারেন! বাবা নিজেকে সংবরণ করতে পারছিলেন না। পাগলের মতো ছোটাছুটি করছিলেন।


২৭ মার্চের রাত পার হওয়ার পর আমার মামা বাসায় এসে বললেন, এখনই চলো। তোমাদের ভীষণ বিপদ। আমি তোমাদের নিয়ে যাচ্ছি। এর পর আমরা গ্রামের দিকে ছুটি; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। তবে সেখানেও নিরাপদ বোধ করেননি মা-বাবা। এক দিন পরই নৌকায় করে আমরা অন্য একটি গ্রামে যাই। গ্রামের নাম চাউরা। কিছুদিন পর সেখান থেকেও আমাদের সরে যেতে হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়াটা খুব কঠিন ছিল। বাবা দ্বিধায় ছিলেন। মা সিদ্ধান্ত নিলেন– আমাদের ওপারে চলে যেতে হবে। প্রথমে ঘরছাড়া হলাম, এর পর দেশছাড়া। যখন যাচ্ছি, তখন দেখলাম, আমার মা-বাবার চোখে পানি। সীমান্ত পার হওয়ার সময় বাবা মাটি ছুঁয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। 


আমরা সীমান্ত পার হলাম আগরতলা দিয়ে। শোভা মাসি (শোভা বসু) মায়ের সঙ্গে কলকাতায় পড়তেন। তিনি আমাদের জন্য যেন ফেরেশতা হয়ে আসেন। কিছুদিনের জন্য আমরা চার ভাইবোন আগরতলায় শোভা মাসির কাছে থেকে গেলাম। মা-বাবা বিমানে করে গেলেন পশ্চিমবঙ্গে প্রথম বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করতে। 


ওপারে কাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে আপনার?


শারমিন মুরশিদ: শোভা মাসির কাছে থাকা অবস্থায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়েছে। জায়গাটি মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বিশ্রামাগার হয়ে ওঠে। সেখানে কয়েক মাস থাকার সুযোগে অনেক যোদ্ধা এবং নিঃস্বার্থ যুবকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হুমায়ুন চৌধুরী, জাহানারা ইমামের ছেলে শাফী ইমাম (রুমী), সামাদ ভাই এবং আরও অনেকে ছিলেন। কেউ এক বেলা বিশ্রাম বা এক বেলা খাওয়ার জন্য আসতেন। এক বিকেলে দুটি সামরিক জিপ আমাদের দোরগোড়ায় এসে থামল। মেজর জিয়াউর রহমান ও মেজর খালেদ মোশাররফ ঘরে প্রবেশ করলেন। ততদিনে এ দু’জনের সাহস ও বীরত্বের কথা মানুষের মাঝে পৌঁছে গিয়েছিল।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us