তিনি ছিলেন সৌম্যদর্শন। পোশাকে–আশাকে ছিল বনেদিআনার ছাপ। প্রতি বিকেলে তাঁকে অবধারিতভাবেই দেখা যেত ঢাকা স্টেডিয়ামের চৌহদ্দিতে। মাথায় হ্যাট, হাতে নোটবুক আর কলম। ষাটের দশকে ঢাকা স্টেডিয়ামে ফুটবল, হকি কিংবা ক্রিকেট—প্রায় সব খেলাতেই তাঁর উপস্থিতি আলাদাভাবেই নজর কাড়ত। মনোযোগ দিয়ে খেলা দেখছেন, ফাঁকে ফাঁকে নোটবুকে নোট নিচ্ছেন। ইংরেজি দৈনিক দ্য পাকিস্তান অবজারভারের ক্রীড়া সম্পাদক হয়েছিলেন তিনি। সেই মানুষটিকেই ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দোসর আলবদরের নরপশুরা। অকৃতদার মানুষটির আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনা ও তাঁর দোসরদের হাতে হারিয়ে যাওয়া হাজারো বাঙালির একজন তিনি।
মানুষটির নাম শেখ আবদুল মান্নান। এস এ মান্নানও অনেকে বলতেন। তবে স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে তিনি ‘লাডু ভাই’ হিসেবেই তাঁর পরিচিতি বেশি। স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে ঢাকার খেলাপাগল মানুষদের খুবই আপনজন ছিলেন তিনি। এমন একটা সময় তিনি ক্রীড়া সাংবাদিকতা করতেন, যখন দেশের পত্রিকাগুলোয় খেলার খবরের গুরুত্ব ছিল না বললেই চলে। পুরো একটা পাতা যে খেলার খবরের জন্য বরাদ্দ হতে পারে, সেটা ভাবতেই পারতেন না সম্পাদকেরা। সেই সময় অবজারভারে গোটা একটা পাতাতেই থাকত খেলার রকমারি খবর। ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে এস এ মান্নান পাঠকদের জন্য লিখতেন খেলার আদ্যোপান্ত, নানা আলোচনা, সমালোচনা। তাতে থাকত খেলার জগতে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি ক্রীড়াবিদদের প্রতি শোষণ আর বঞ্চনার কথা।