দিন কয়েক পরই বিজয়ের ৫৩তম বার্ষিকী উদযাপন করব আমরা। এরই মধ্যে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক নানা আয়োজন। কিন্তু এসবের কোথাও নেই মুক্তিযুদ্ধে নদীর অবদান নিয়ে কোনো আলোচনা বা আয়োজন। অথচ একাত্তরের নয় মাসে অন্য অনেক কিছুর মতো নদীই হয়ে উঠেছিল অন্যতম সহায়ক শক্তি। আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ নদীর দেশ। নদী মানেই বাংলাদেশ। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা হাজারো নদ-নদীতে ঘেরা এর ভূখণ্ড। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলার মানুষ নদীতীরে বসতি গড়েছে। সখ্য করেছে নদীর সঙ্গে। নদী হয়েছে তার আপনজন। তবে এ নদীর সঙ্গে তাদের বৈরিতাও কিন্তু কম নয়। বন্যা, হঠাৎ পাহাড়ি ঢল ও ভাঙন নদী পাড়ের মানুষের নিত্যসঙ্গী।
এই নদ-নদীই ১৮৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় ত্বরান্বিত করেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণের একপর্যায়ে পাকিস্তানিদের হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, ‘আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব’। বাংলার নদী-নালা, খাল-বিলকে মনে রেখেই তিনি তাদের পানিতে মারার কথা বলেছিলেন। কারণ তিনি জানতেন, পাকিস্তানিদের জন্য নদ-নদীতে ঘেরা এ ভূখণ্ড অবাধ বিচরণে সহায়ক হবে না। বঙ্গবন্ধু বাংলার নদীর গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন বহু আগেই। তিনি নিজেকে ‘পানির দেশের মানুষ’ বলে পরিচয় দিতেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এ নদীকে কেন্দ্র করেই সমর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। এর প্রধান কারণ বাংলার এ অঞ্চলটিই নদ-নদীপ্রধান। এর প্রমাণ পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতীয় বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার লেখায়। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল ঢাকা। যেভাবেই হোক ঢাকা পৌঁছতে হবে, ঢাকাকে দখল করে নিতে হবে। কাজটি যত দ্রুত সম্ভব হবে, পাকিস্তানিদের পরাজয় তত সহজতর হবে। আর তা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সবদিক থেকে শত্রুদের বহুমুখী আক্রমণ চালাতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের ভাবনার অগ্রভাগে ছিল নদী। পূর্ব বাংলাকে নদী দিয়ে বিভক্ত করে এলাকা অনুযায়ী চারটি সেক্টরে ভাগ করে অভিযান পরিচালনা করলে লক্ষ্য পূরণ সহজ হবে, এটাই ছিল তাদের পরিকল্পনা। একইভাবে পাকিস্তানি লে. জেনারেল এএকে নিয়াজি ১৯৭১-এর যুদ্ধে বাংলাদেশের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করে সেনা মোতায়েন করেছিলেন। তাতে নদীই ছিল গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনার অংশ।