সম্প্রতি স্বনামধন্য এক ব্যাংকের মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় রিসোর্স পারসন হিসেবে অংশ নিই। ওই সেশনে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং পেশায় থাকা একজন ব্যক্তির কেন মার্কেটিং বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, সেই জ্ঞান কীভাবে তাকে সাহায্য করে এবং সেগুলোর অনুপস্থিতি তাকে কেমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে—এমন নানা বিষয়ে আলোকপাতের চেষ্টা করি। সেই কর্মশালার মূল বিষয়গুলো শেয়ার করাই আজকের নিবন্ধের উদ্দেশ্য।
আমাদের ছাত্রজীবনে একটি পণ্য উৎপাদন-পরবর্তী নানা পর্যায় পেরিয়ে ভোক্তাদের হাতে পৌঁছা পর্যন্ত কাজগুলোই মার্কেটিংয়ের আওতায় পড়ে বলে ধারণা করা হতো। তখন সেবা খাতের মার্কেটিং বিষয়ে খুব একটা আলোচনা হতো না। কিন্তু গত তিন দশকে এ খাতের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। নিত্যদিন ঘটছে প্রযুক্তি পণ্যের কল্পনাতীত সব প্রসার। সঙ্গে বেড়েছে ক্রেতাদের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা। ফলে মার্কেটিংয়ের আওতা ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। শিল্পোন্নত রাষ্ট্র তো বটেই এমনকি আমাদের মতো দেশেও সেবা খাতের বিস্তৃতি লক্ষণীয়। দেশের জিডিপিতে খাতটির অবদান ৫১ ভাগ! তাই গতিশীল প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে মার্কেটিংয়ের প্রচলিত ধারণা থেকে বের হয়ে এসেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তারা সদা সচেষ্ট রয়েছে।
তাছাড়া আগে একজন ব্যক্তি কোনো চাকরিতে প্রবেশের পর আজীবন সেখানেই রয়ে যাওয়ার মানসিকতা লালন করতেন। প্রতিষ্ঠান বাধ্য না করলে সেখানেই জীবন কাটিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা থাকত। ফলে কর্মরত প্রতিষ্ঠানে নিজ দায়িত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাজকর্মগুলো একবার রপ্ত করলে বাকি জীবন নিশ্চিন্তে কাটানো যেত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বহুলাংশে বদলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন ব্যক্তি সারা জীবনে গড়ে ১২টি জব করে! আমাদের দেশেও এক যুগের করপোরেট ক্যারিয়ারে চার-পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বদল স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ফলে বাস্তবতার সঙ্গে তাল মেলাতে কর্মীদের নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নে নানা চ্যালেঞ্জ নিতে দেখা যাচ্ছে। ক্যারিয়ারের শুরুতে শেখা বিশেষ কোনো দক্ষতা নিয়ে তৃপ্ত থাকার দিন এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।
কর্মক্ষেত্রে সম্মানজনকভাবে টিকে থাকার স্বার্থে সারা জীবন শেখার মানসিকতা দ্রুতই অপরিহার্য হয়ে উঠছে। মোবাইল-টেলিফোন, ইন্টারনেট ও হোয়াটসঅ্যাপ-পূর্ব নব্বই দশকের একজন ব্যাংকারের কথা ভাবুন। তখন প্রযুক্তি বলতে ছিল ল্যান্ডফোন আর ক্যালকুলেটর। তাও সবাইকে সেগুলো ব্যবহার করতে হতো না। অথচ এখন প্রত্যেক কর্মী পেশাগত প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত অসংখ্য ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সঙ্গে কানেক্টেড থাকছেন। তাদের নিত্যনতুন টেকনিক্যাল স্কিল অর্জন করতে হচ্ছে। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে সফট স্কিলস। আসলে এটিই প্রতিযোগিতার ফল নির্ধারণ করছে। কারণ আপনার প্রতিযোগী চাইলেই রাতারাতি লেটেস্ট টেকনোলজির মালিক হতে পারে। কিন্তু দক্ষ ও আন্তরিক সেবা প্রদানের জন্য মানবসম্পদ তৈরি করতে পারে না। মানবীয় গুণাবলি অর্জন ও চর্চায় মার্কেটিংয়ের জ্ঞান একজন কর্মকর্তাকে বিশেষভাবে সাহায্য করতে সক্ষম। বিশেষত ব্যাংকিয়ের মতো সেবানির্ভর পেশায়।