মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি বন্ধ করতে হবে

আজকের পত্রিকা এ কে এম শামসুদ্দিন প্রকাশিত: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৭

বছর ঘুরে ডিসেম্বর মাস এলেই যেন মুক্তিযুদ্ধের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। চোখের কোণে ভেসে ওঠে আবেগতাড়িত দুর্বিষহ ঘটনার সব দৃশ্যাবলি। ডিসেম্বর হলো বাঙালির আবেগের মাস, বিজয়ের মাস; বিশেষ করে আমরা যাঁরা এখনো বেঁচে আছি, তাঁরা অনেকেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি।


মার্চের অসহযোগ আন্দোলন থেকে শুরু করে ডিসেম্বরের চূড়ান্ত বিজয় অবধি এমন অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এখনো অনেকে বেঁচে আছেন। তাঁদের কাছে ডিসেম্বর মানেই এক অবিস্মরণীয় বিজয়ের গল্পগাথা। তবে এ বিজয় এত সহজে আসেনি। লাখো শহীদের রক্তে সিক্ত এ দেশের প্রতিটি ধূলিকণা যেন তারই সাক্ষ্য দেয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা, উনসত্তরের ১১ দফা ও গণ-আন্দোলন এবং একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে সশস্ত্র স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তার পরিসমাপ্তি ঘটে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে।


একাত্তরের ১ মার্চ। বেলা ঠিক ১টা বেজে ৫ মিনিট। আসন্ন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান। জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণার পরপরই ঢাকা শহরজুড়ে রাস্তায় নেমে আসে বিক্ষুব্ধ মানুষ। দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে যায়। শহরের পাড়া-মহল্লা থেকে ছাত্র-জনতা মিছিল বের করে এর প্রতিবাদ জানায়। কেবল বেসরকারিই নয়, সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রাস্তায় নেমে আসেন। মুহূর্তে মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় ঢাকা শহর। এসব মিছিল এসে জড়ো হতে থাকে হোটেল পূর্বাণীর সামনে। হোটেল পূর্বাণীতে চলছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বৈঠক। যেখানে ৬ দফা দাবির ওপর ভিত্তি করে শাসনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়নের কাজ চলছিল। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিতের ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলার মানুষ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে।’ তিনি ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ বেলা ২টা পর্যন্ত দেশের অন্যান্য জেলায় হরতাল পালনের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভার ঘোষণা দেন এবং ওই জনসভাতেই পরবর্তী পরিপূর্ণ কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন বলে জানান।


কার্যত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকেই সমগ্র দেশ পাকিস্তানের হাতছাড়া হয়ে যায়। দেশ তখন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই পরিচালিত হতে থাকে। এ অবস্থায় ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠক করতে বাধ্য হন। তবে সেটা ছিল সম্পূর্ণ প্রহসনের বৈঠক। সময়ক্ষেপণ করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য সমাবেশ করাই ছিল জান্তাগোষ্ঠীর মূল উদ্দেশ্য। দিনের পর দিন বৈঠক করে ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া খান চোরের মতো পাকিস্তানে পালিয়ে যান। এরপর সেদিন মধ্যরাত থেকেই ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দখলদার বাহিনীর ভারী অস্ত্রের গোলার শব্দে রাতের নীরবতা ভেঙে চারদিক ভয়ংকর করে তোলে।


২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের পর মুক্তিবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রমাগত অভিযানে পাকিস্তানি হানাদাররা পর্যুদস্ত হতে থাকে। বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, রেললাইন, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসের মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রায় সব যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ফলে তাদের হেডকোয়ার্টার্স থেকে ফ্রন্ট লাইনে অবস্থানরত ব্যাটালিয়নগুলোতে যুদ্ধ সরঞ্জাম ও লজিস্টিক সরবরাহব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরুর প্রস্তুতি হিসেবে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড গঠন করা হয় এবং ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বের সূচনা হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি সেক্টরে, মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় বাঙালিদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় যৌথবাহিনী সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করে। ফলে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৬ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর কাছে দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us