আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে বাজার। বাজারের হট্টগোল এবং কোলাহলের মধ্যেও এক ধরনের জীবনমানের বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে মানবসমাজ গড়ে উঠেছে বাজার কেন্দ্র করে। বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার আদান-প্রদান, ঝগড়া ও বন্ধুত্ব সবকিছুই সমাজ গঠনের সঙ্গে যুক্ত।
নৃ-বিজ্ঞানীরা প্রাচীন কোনো সভ্যতা বা জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি বোঝার জন্য সবার আগে সেখানকার বাজার ব্যবস্থা কেমন ছিল তা দেখার চেষ্টা করেন। আধুনিক ভারত এবং এর পটভূমি সম্পর্কে গবেষণা করতেও এটা একটি ভালো উপাদান।
কিছুদিন আগে দিল্লির বিভিন্ন বাজারের মধ্য দিয়ে হেঁটে গেছি আমি। কথা বলেছি বন্ধুভাবাপন্ন দোকানদার ও ফুটপাতের ধারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। ভারতের ঐতিহ্যবাহী উষ্ণ আভার অনুভূতি নিয়েছি এবং আনন্দ করেছি। তারপর এ দেশের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী না হওয়ার কোনো কারণ ছিল না।
এটি এমন একটি জায়গা যেখানে কেউ প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে বা রাস্তা বলে দিতে মোবাইল ফোনের দিকে তাকায় না। আপনি সেখানে যার কাছেই প্রয়োজনীয় কোনো তথ্য জিজ্ঞাসা করুন, দেখবেন বেশকিছু স্থানীয় ছুটে এসেছে আপনাকে সহযোগিতার জন্য।
আমি একটি ছবি তোলার দোকানের খোঁজ করছিলাম। তখন আমার অভিজ্ঞতাটা ছিল এ রকম, ছেঁড়া পোস্টার এবং পলেস্তারা খসে পড়া সারিবদ্ধ বিল্ডিংয়ের মধ্যে একটি সরু গলি। তার মধ্যে রাউল ডুফি স্কেচের মতো একটি ফটো স্টুডিও।
যখন আমি দরজা দিয়ে ভেতরে পা রাখলাম, দোকানের মালিক এবং তার দুজন সহকারী সুরেলা বৈদিক গান শুনছিলেন। আমাকে দেখে দোকানের মালিক চওড়া হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন আমি একটি ‘সুন্দর’ ছবি তুলতে চাই কিনা। আমি প্রতিক্রিয়া জানানোর আগেই তার সহকারীরা স্টুডিও প্রস্তুত শুরু করল। তারা ক্যামেরা সেটআপ করল, আলোর ব্যবস্থা করল, আমার পেছনের পর্দা ঠিক করল এবং আমার চিবুকের কাছে স্পর্শ করে মাথা কাত করে নিল যাতে ভালো ফ্রেম পাওয়া যায় এবং ছবিটি সুন্দর আসে।
কয়েকবার ক্যামেরা ক্লিক করার পর ফলাফল যাচাই-বাছাই করতে জড়ো হলো তিনজন। তারা আমার মুখ ও ছবির দিকে বারবার তাকিয়ে যাচাইয়ের চেষ্টা করল ছবিটি ঠিকঠাক হয়েছে কিনা। সহকারীদের মধ্য থেকে একজন বলল ছবিটি আরেকটু ভালো হতে পারত। অন্য সহকারী পরামর্শ দিল আমার মাথায় আরো বেশি চুল যুক্ত করে দিলে ছবি আরো ভালো দেখাবে।