রায় মঙ্গল, মালঞ্চ, আড়পাঙ্গাসিয়া, মামুদ, বেতনা ইত্যাদি অসম্ভব সুন্দর নামের নদ-নদী যে বনের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে, সেটি সুন্দর না হয়ে পারে! বিশাল এই বনের গাছপালা, জীবজন্তু— সবই সুন্দর বলেই হয়তো এর নাম সুন্দরবন।
নজরকাড়া প্রকৃতি, সুন্দর নদ-নদী নাকি নদী ও সাগরমোহনায় ভেসে থাকা অলংকারের মতো ছোট ছোট দ্বীপ— কোন কারণে যে এর নাম সুন্দরবন, সেটা নিয়ে বিতর্ক চলতেই থাকবে। সেই বিতর্ক চলুক। আমরা সুন্দরবনের এক রূপসী দ্বীপের গল্প বলি বরং, যার নাম বঙ্গবন্ধু দ্বীপ। এর আদি নাম বেহালা। অবশ্য মানুষ পুটনী দ্বীপ নামেও ডাকে।
নৌপথে গহিন অরণ্য পেরিয়ে গেলে দেখা মিলবে পুটনী দ্বীপের। এক-দুই মাইল নয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সবশেষ উপজেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ থেকে পাক্কা এক শ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগর এবং আড়পাঙ্গাসিয়া নদীর মোহনায় জেগে আছে বঙ্গবন্ধু দ্বীপ।
শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ এলাকাটি সুন্দরবনের কোলঘেঁষা। সাতক্ষীরা থেকে সুন্দরবনে যেতে হলে শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট অফিস থেকে অনুমোদন নিতে হয়।
গহিন সুন্দরবনে বেশ কবার গিয়েছি। সাগরতীরে দুবলার চরে গিয়েছি ছয় বছর বয়সে। তবে সাতক্ষীরার শেষপ্রান্তে সুন্দরবন থেকে বঙ্গোপসাগর আগে দেখা হয়নি। সেই সুযোগ মিলে যায় এই মাসের ২ তারিখ।
আগের দিন ১ নভেম্বর, বুধবার রাতে মুন্সিগঞ্জ থেকে ছোট ট্রলারে চেপে সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়ায় রওনা হই। সঙ্গে জনা বিশেক মানুষ। সবাই শ্যামনগরের বাসিন্দা। আমাদের ট্রলারটিকে ছোটখাটো লঞ্চও বলা যেতে পারে। তাতে অতি ছোট কেবিন ছিল ছয়টি। কেবিন মানে আলাদা করে ঘেরা একটি খাট। কোনোমতে ওই খাটে দুজন ঘুমাতে পারবে। তিনটি খোপের মতো জানালা প্রতিটি কেবিনে। জানালার ধারে বসে আরাম করে নদীর বাতাস খেতে খেতে সুন্দরবন যাওয়া যায়।