শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক, এটি শিক্ষাজীবনে বাঁক বদলের সময়কাল। উচ্চমাধ্যমিকে এসএসসি থেকে সময় পাওয়া যায় কম অথচ প্রতিটি বিষয়ের ভলিউম থাকে কয়েকগুণ বেশি। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রায় সবাই তাদের পুরনো ও চিরাচরিত প্রতিষ্ঠান ছেড়ে, বন্ধুদের ছেড়ে, শিক্ষকদের ছেড়ে নতুন এক পরিবেশে শিক্ষাগ্রহণ করতে যান। নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে খাওয়াতেই তাদের সময় চলে যায়, এর মধ্যে হাজির হয় পরীক্ষা। এই সব দিক বিবেচনায় উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার একটি ভিন্নমাত্রা রয়েছে, ভিন্ন দিক রয়েছে। অথচ কে কোন ধরনের ডিসিপ্লিনে পড়বেন নাকি কর্মজীবনে প্রবেশ করবেন সেটিও কিন্তু নির্ধারিত হয় এর ফলের ওপরই। সবদিকে দিয়ে বিবেচনা করে উচ্চমাধ্যমিকের ফল একটি জটিল সমীকরণের ওপর প্রতিষ্ঠিত। সবধরনের প্রতিকূলতা ফেস করে যারা নিজেদের পড়াশোনায় নিয়োজিত রাখতে পারেন, তাদের মধ্য থেকেই সাফল্যের বরপ্রাপ্তদের আমরা দেখতে পাই। যারা কৃতকার্য হয়েছেন তাদের অভিনন্দন জানাই, যারা হতে পারেননি তাদের ভেঙে পড়ার কিছু নেই। জীবনের সব সাফল্যই কিন্তু পাবলিক পরীক্ষার ফলের ওপর নির্ভর করে না। তবে তিন লাখ শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়ার কারণ কিন্তু এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এজন্য শুধু শিক্ষার্থীদের ওপর দোষ চাপালেও হবে না। এর প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি।
করোনা পরবর্তী সময়ে এটিই প্রথম পূর্ণাঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা, যেখানে শিক্ষার্থীদের এক বড় অংশকে হোঁচট খেতে দেখা গেছে। এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ড থেকে মোট ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৫ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ৬ লাখ ৮৯ হাজার ছাত্র ও ৬ লাখ ৬৮ হাজার ছাত্রী। ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাত বলা যায় প্রায় সমান সমান। এটি একটি চমৎকার দিকনির্দেশ করে যে, নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় মাধ্যমিকের মতোই। তার মানে হচ্ছে নারী শিক্ষার্থী সেভাবে ঝরে যায়নি মাধ্যমিকের পরে, অন্তত সংখ্যার ফিগার তাই-ই বলছে। এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৯ শতাংশ যা গতবার ছিল ৮৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। সব ধরনের বোর্ড মিলিয়ে ২০২৩-এ এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গতবার এই হার ছিল ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। পাসের হার ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে এ ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা ৩.৮১ শতাংশ বেশি এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ছাত্রীরা ছাত্রদের চেয়ে ৬ হাজার ১৩৫ জন বেশি। বোর্ডভিত্তিক পাসের হারে বরিশাল বোর্ড সবার ওপরে, এখানে পাসের হার ৮০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, আর যশোর সবার পেছনে। এ বোর্ডে পাসের হার ৬৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এক বোর্ড থেকে আরেক বোর্ডে পাসের হার কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়ার পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ কোনো বছরই খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ এই ঘটনাটি প্রতি বছরই ঘটে থাকে, আমরা বিষয়টি নিয়ে লিখেও থাকি। কিন্তু এর কারণ খুঁজে দেখার কোনো ধরনের তাগিদ দেখা যায় না। আবার ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা প্রায় বছরই কেন এগিয়ে থাকেন সে কারণও আমাদের গবেষণার চোখ দিয়ে দেখা উচিত। সাধারণত আমরা ধরে নিই ছেলেরা বাইরের বিভিন্ন ধরনের ঝামেলায় ব্যস্ত থাকেন, জড়িয়ে যান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর সময় ব্যয় করে এবং নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো কম ঘটে, ফলে তারা প্রায় প্রতি বছরই পাবলিক পরীক্ষার ফলে এগিয়ে থাকেন। এটি অনুমিত কারণ কিন্তু এর এভিডেন্স বেইজড কিছু কারণ বের করা প্রয়োজন।