পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আদিতম বিষয়গুলোর অন্যতম ‘কৃষি’। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সংশ্লিষ্টতায় কৃষির বিকল্প নেই। কৃষিই পৃথিবীর মূল চালিকাশক্তি। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বিনোদনের অধিকাংশ উপাদান আসে এ কৃষি থেকেই। ফসল উৎপাদন, পশুপাখি পালন, মাছ চাষ এবং বনায়নের জন্য মাটির জৈবিক ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনাই হলো কৃষি। কৃষিকাজ মানবজাতির আদিমতম পেশা। এ কৃষিকার্য প্রচলনের ইতিহাস হাজার বছরেরও পুরনো।
বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর কৃষিশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কৃষিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদানকারী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মো. দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কৃষিতে উচ্চতর ডিগ্রি প্রদান করে এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, সিটি বিশ্ববিদ্যালয়, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ররীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশের দুটি সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ ও সিরাজগঞ্জ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজকে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) অধিভুক্ত করা হয়।
যেসব উদ্দেশ্য নিয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কৃষিবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় উচ্চতর ডিগ্রি প্রদান; ফলিত কৃষি গবেষণার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তত্ত্ব ও তথ্য জোগানো; উন্নত ফসলের জাত, লাগসই প্রযুক্তি এবং আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার উদ্ভাবন ও প্রসার ঘটানো; উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায় অন্যান্য শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা করা এবং কৃষি সম্প্রসারণে সক্রিয় ভূমিকা রাখা। স্বাধীনতা-উত্তর দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদার ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি নতুন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও কৃষিশিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কিন্তু দেশের চলমান খাদ্য সংকটের আজকের বাস্তবতায় উচ্চতর কৃষিশিক্ষার বিদ্যমান কারিকুলাম ও গুণগত মান নিয়ে মূল্যায়ন করা উচিত। দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর আগামীর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে এখনই এ বিষয়ে যথাযথ গুরুত্বারোপ করার কোনো বিকল্প নেই।