ফিলিস্তিনি শিশুসহ সব স্তরের মানুষের ওপর ইসরায়েলি নৃশংসতার দুটো দিক: একটি হলো ইসরায়েলের আগ্রাসন ও সুপরিকল্পিত গণহত্যার ধারাবাহিকতা এবং অন্যটি হলো এর অবসানে আন্তর্জাতিক সব আইন ও প্রতিষ্ঠানের অকার্যকারিতা।
বহু বছর ধরে তো চলছেই, শুধু গত ৭ অক্টোবরের পর থেকেই ইসরায়েলি বাহিনী প্রায় ১৪ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, এর মধ্যে প্রায় ৬ হাজার শিশু এবং ৪ হাজার নারী। জখম হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। নিখোঁজ প্রায় ৬ হাজার। এগুলো কি শুধুই সংখ্যা? একেকজনের সঙ্গে কত মানুষ, আর এই নৃশংসতা যে ক্ষোভ ও ঘৃণা তৈরি করে, তা কত দূর যাবে?
জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতসহ বিশ্বের যাবতীয় প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হওয়ার কারণ বিশ্বের ক্ষমতাধর শক্তি যুক্তরাষ্ট্র দখলদার ইসরায়েল সরকারের পক্ষে, আর যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বড় রাষ্ট্রগুলো তার পেছনে। শুধু পক্ষে বললে ভুল হবে, এই গণহত্যা অব্যাহত রাখতে তারা জাতিসংঘসহ সব প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করে দিচ্ছে। তাহলে বিশ্ব কীভাবে চলে?
আইন, প্রতিষ্ঠান এগুলো কই? যুক্তরাষ্ট্র বহুবারই দেখিয়েছে যে এই বিশ্ব চলে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ পদ্ধতিতে। নিজেদের অপরাধের বৈধতা দিতে তারা কীভাবে গণমাধ্যম ব্যবহার করে, তার বহু প্রমাণ আছে। সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি দাবির ওপর ইরাক দখল হলো, ১০ লক্ষাধিক মানুষ খুন করা হলো। এর জন্য যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কয়েকজন মার্কিন প্রেসিডেন্টসহ কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হওয়ার কথা। হয়নি, আর যুক্তরাষ্ট্র এই আদালতের সদস্যপদই নেয়নি।
গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালানোর পর থেকে ইসরায়েলেরও সহস্রাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এর দায় কার? হামাস নামের একটি সংগঠনের, না ইসরায়েল রাষ্ট্রের, না ইসরায়েলকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া রাষ্ট্রগুলোর?
এর উত্তর পাওয়া যায় ইসরায়েলেরই একজন লেখক ও সাংবাদিক গিডিওন লেভির প্রতিক্রিয়ায়। তিনি এর দুই দিন পর সে দেশেরই পত্রিকা হারেৎজ-এ লিখেছেন এভাবে, ‘এই সবকিছুর জন্য দায়ী ইসরায়েলি ঔদ্ধত্য; এ রকম একটা ধারণা যে, আমরা যা খুশি তা করতে পারি, এ জন্য আমাদের কোনো মূল্য দিতে হবে না এবং কোনো শাস্তি পেতে হবে না।...আমরা ফিলিস্তিনিদের গ্রেপ্তার করব, হত্যা করব, হয়রানি করব, উচ্ছেদ করব আর তাদের ওপর গণহত্যা কার্যক্রম চালানো শেটেলার বা দখলদারদের রক্ষা করব। আমরা নিরপরাধ মানুষের ওপর গুলি চালাব, তাদের চোখ তুলে ফেলব, মুখ ভেঙে ফেলব, তাদের বহিষ্কার করব, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করব, তাদের বিছানা থেকে তুলে নিয়ে আসব এবং অবশ্যই গাজা উপত্যকায় অবিশ্বাস্য অবরোধ চালিয়ে যাব আর ধরে নেব সবকিছু ঠিকমতো চলবে।’ (বাংলা অনুবাদ-সর্বজনকথা, নভেম্বর ২০২৩)