এক-দেড় বছরে দ্রব্যমূল্য যে হারে বেড়েছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার নতুন কিছু নেই—নিতান্ত উচ্চবিত্ত ধরনের অল্পকিছু মানুষ যারা আছে ওরা ছাড়া দেশের সব মানুষই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির শিকার। কাঁচা মরিচ থেকে সোনাদানা বাজারদর আকাশ স্পর্শ করেনি এমন পণ্যের নাম খুঁজে পাওয়া কঠিন।
জিনিসপত্রের দাম একবার বাড়লে তা যে একদম কমে না তা নয়—দাম একবার আকাশ ছুঁয়ে ফেলার পর আবার খানিকটা কমেও যায় কখনো কখনো। কিন্তু এইরকম দাম কমে গেলেও দেখা যায় যে কমে যাওয়া দামটাও পূর্বের দামের চেয়ে খানিকটা বেশি। এইরকম মূল্য বৃদ্ধি এবং আরও বৃদ্ধি এইসব নিয়ে আমরা স্বাভাবিকভাবেই আলোচনা করি, ক্ষোভ প্রকাশ করি কিন্তু ক্ষোভটা সাধারণত প্রকাশিত হয় ‘সিন্ডিকেট’ ও ‘অসাধু ব্যবসায়ী’ নামক একদল অদৃশ্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।
কারা যে এই সিন্ডিকেট আর কারা যে এই অসাধু ব্যবসায়ী তা সাধারণ ক্রেতাদের পক্ষে চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না—সরকারও যে ওদের চিহ্নিত করতে পারে বা করতে চায় তাও মনে হয় না।
আমি নিবেদন করি এইখানে আমাদের কিছু ভ্রান্তি রয়ে গেছে। প্রথম ভ্রান্তিটা ‘সিন্ডিকেট’ আর দ্বিতীয় ভ্রান্তিটা ‘অসাধু ব্যবসায়ী’ এবং দুই ভ্রান্তি মিলে অনিয়ন্ত্রিত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছেন যার মূল দায় সেই সংস্থাটি আড়াল হয়ে যায়। সিন্ডিকেট নিয়ে ভ্রান্তিটা কী? তাহলে তো প্রথমেই জিজ্ঞাসা করতে হয় কে এই সিন্ডিকেট বা কারা এই সিন্ডিকেট?
গণমাধ্যমে জানা যায়, সিন্ডিকেট বলতে আমাদের মধ্যে যে ধারণাটা হয়েছে তা হচ্ছে যে সিন্ডিকেট মানে হচ্ছে একটি বিশেষ পণ্যের উৎপাদক বা সরবরাহকারীদের একটি অনানুষ্ঠানিক সংঘ, যারা একত্রিত হয়ে বাজারে সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে ওদের যে ক্ষমতা তা ব্যবহার করে কোনো একটি বা একাধিক পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বা অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দেয়।
ধরুন, সয়াবিন তেল। বাংলাদেশে এর সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে এই রকম উৎপাদক ও আমদানিকারকরা, এরা চাইলে সবাই মিলে তেলের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে—হয়তো একশ টাকার পণ্যের দাম ওরা দুইশ টাকায় তুলে দিল, পঁচিশ তিরিশ দিন পর তা কমিয়ে আবার দেড়শতে নামিয়ে নিয়ে এলো।