দেশের শ্রমশক্তি রফতানি ও অভিবাসন বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক সি আর আবরার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে চার দশকের অধ্যাপনা শেষে এখন কাজ করছেন রোহিঙ্গা অভিবাসী, শ্রম রফতানি, সামাজিক নিরাপত্তা, রিক্রুটমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে। দেশের শ্রমশক্তি রফতানি খাত, সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা, রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে।
দেশের শ্রমশক্তি রফতানির সময়কাল প্রায় অর্ধশতক ছুঁইছুঁই। এ সময়ে শ্রমশক্তি রফতানিতে আমাদের অর্জন এবং সংকটকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সি আর আবরার: দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হিসেবে অভিবাসন এখন জাতীয় শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বিশেষ করে জাতীয় সংকটকাল, অর্থনৈতিক মন্দা, কভিড এবং বর্তমান অর্থনৈতিক টানাপড়েনে শ্রম অভিবাসনের গুরুত্ব ভীষণভাবে বেড়েছে। অতীতের তুলনায় এ খাতের ভূমিকা যেমন বেড়েছে, তেমনি এ খাতকে ঢেলে সাজানোর গুরুত্বও বেড়েছে। এর জন্য নীতিনির্ধারণ, আইন প্রণয়ন, বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক এবং আইনি কাঠামো তৈরি হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে যাতে সেবা প্রদান করা যায় তার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।
বিপরীতে মোটা দাগে বলতে গেলে, অভিবাসন ব্যয় এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে, অভিবাসীরা হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট দেশে নিয়োগকর্তা অথবা এজেন্টদের মাধ্যমে নানা সমস্যার মুখে পড়ছেন। কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাচ্ছেন না, প্রত্যাশিত বেতনও দেয়া হচ্ছে না। নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মুখে পড়ছেন, বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। আবার প্রবাস ফেরতদের পুনঃএকত্রীকরণের উদ্যোগ আগে ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে এ উদ্যোগ নেয়া হলেও বড় আকারে সম্ভব হয়নি। এসব বাধা দূর করতে হবে। নিগ্রহের শিকার প্রবাসীদের ন্যায়বিচারের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে ভূমিকা পালন করতে হবে। সবচেয়ে বড় শক্তির উৎস রাষ্ট্র, রাষ্ট্রকে এখানে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। নিয়োগ এখনো দুষ্ট চক্র দিয়ে বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত। এগুলো থেকে বের হওয়ার উপায় আমরা বের করতে পারিনি। এসব সমস্যাকে চিহ্নিত করে উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
নীতিমালা, আইন, সরকারের আদেশ জারি হয়েছে। কিন্তু কার্যকর কতটুকু হচ্ছে?
সি আর আবরার: নীতিমালা রয়েছে কিন্তু সেগুলো কার্যকর করা হচ্ছে না। দুষ্ট চক্র এমন শক্তিশালী যে তাদের এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। মালয়েশিয়ার ঘটনাগুলোয় মূল হোতা কারা তা সর্বজনবিদিত। বেসরকারি খাত, সরকার এবং নাগরিক সমাজও সেগুলো জানে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। কেন নেয়া হচ্ছে না, কারা এর মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে তা কর্তৃপক্ষকে বিবেচনায় নিতে হবে। এ দায়দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।